খুলনার শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক ভোটার রয়েছেন। আর খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার নতুন ভোটার হয়েছেন ৪১ হাজার তরুণ। এই শ্রমিক ও নতুন ভোটাররা ১৫ জুনের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন নগরবাসী।
খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজার ৫৬৮। এর মধ্যে শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত খালিশপুরের ছয়টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৭৪ হাজার ১১৩ জন। এর অর্ধেকেরও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক। এ ছাড়া রূপসা এলাকায়ও অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক ভোটার রয়েছেন। এখানকার ভোটারদের প্রধান দাবি, বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানাগুলো আবার চালু করা হোক।
খালিশপুরের একটি চায়ের দোকানে সুলতান, রমজান, রায়হান, আজিজুল, আলিনুরসহ আরও কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, যাঁরা তাঁদের নিয়ে চিন্তা করবেন তাঁদেরই ভোট দেবেন। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাওছার আলী প্রথম আলোকে বলেন, খালিশপুরের বেশির ভাগ মানুষই শ্রমজীবী। কোন প্রার্থী কীভাবে কলকারখানা চালু করবেন, কীভাবে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার জন্য সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করবেন, সেসব দেখে এখানকার ভোটাররা ভোট দেবেন।
খালিশপুরের বাসিন্দারা জানান, বিএনপির আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া পিপলস জুট মিল খালিশপুর নামকরণ করে নতুন করে চালু হয়েছে। এ ছাড়া দৌলতপুর জুট মিল আংশিক চালু হয়েছে। এ কারণে এখানকার ভোটাররা বর্তমান সরকারের ওপর খুশি। অন্যদিকে বারবার খোলার ঘোষণা দিলেও খালিশপুরের নিউজপ্রিন্ট মিল ও হার্ডবোর্ড মিল এখনো বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর শ্রমিকেরা ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। রূপসার দাদা ম্যাচও চালু হয়নি।
শিল্পাঞ্চলের ভোটারদের মন পেতে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান দুজনেই নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নে কাজ করবেন। তিনি এখানকার বন্ধ কলকারখানা চালু, নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি খালিশপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলকে কর্মচঞ্চল করতে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন।
মনিরুজ্জামান বলছেন, তিনি নির্বাচিত হলে খালিশপুর শিল্পাঞ্চল পুনরুজ্জীবিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। তাঁর দাবি, অব্যবস্থাপনার কারণেই শিল্প-কারখানাগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। শ্রমজীবী মানুষ রুটিরুজি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই তিনি এ ব্যাপারে যথাসাধ্য পদক্ষেপ নেবেন।
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৮ জন। পাঁচ বছরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ৪১ হাজার ২৬৯ জন ভোটার। নতুন এই ভোটাররা তরুণ। এই ভোটারদের ভোট পেতে প্রধান দুই প্রার্থীই তরুণদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলছেন। খালেক বলেছেন তথ্যপ্রযুক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা। আর মনিরুজ্জামান বলছেন তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা। খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম কেবল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির প্রার্থী চিন্তা না করে আরও অনেক কিছু দেখে ভোট দেয়। কিন্তু প্রধান মেয়র প্রার্থীরা তরুণদের জন্য আলাদা করে কিছু বলছেন না।’