‘কাজে লাগছে না জেএসসি’র সনদ’

0
156
Print Friendly, PDF & Email

কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, এতে জেএসসিতে ভালো ফল করার ক্ষেত্রে উৎসাহ হারাবে শিক্ষার্থীরা।

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বক্তব্য পাওয়া যায়নি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটিরও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হয়।

২০১০ সালে প্রথমবার জেএসসিতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরাই এবার এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে শুধু এসএসসির জিপিএ’র ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও ২০১৩ সালে পাস করা শিক্ষার্থীদের দুটি পাবলিক পরীক্ষার সনদ রয়েছে।

এসএসসির ফলের উপর ভিত্তি করে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে গত ১৬ মে নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালায় জেএসসি পরীক্ষার সনদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

এ বিষয়ে নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা জারি করেছে তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। তবে জেএসসির ফলের গুরুত্ব হতে পারত।”

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিবলী মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভার্সিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সব পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট কাউন্ট করা হলে কলেজের ক্ষেত্রে কেন তা হবে না।”

২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নীতিমালাটি ‘পূর্ণাঙ্গ’ হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, জেএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরাই যে এবার কলেজে ভর্তি হবে নীতিমালা প্রণয়নের সময় বিষয়টি নজর এড়িয়ে গেছে। তাই নীতিমালায় এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ সুলতান উদ্দিনও মনে করছেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে মাধ্যমিকের সঙ্গে জেএসসির ফলকে গুরুত্ব দিলে ভালো হত।

এতে জেএসসি পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীরা আরো গুরুত্বের সঙ্গে নিত বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বলেন, কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এসএসসির সঙ্গে জেএসসির ফলকে গুরুত্ব দিলে মেধাবীরা ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পেত।

চট্টগ্রামের ডা. খস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তিতে এসএসরি সঙ্গে জেএসসির ফলও বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানান।

ক্ষোভের সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কলেজে ভর্তিতে জেএসসির সনদ যদি কাজে না লাগে তাহলে এই সনদ দিয়ে কি হবে?”

এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭ জন অংশ নিয়ে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯১ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১ হাজার ২২৬ জন।

ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, শুধুমাত্র এসএসসির ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বাধ্যবাধকতা থাকায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের উপর সর্বোচ্চ ৪৩ গ্রেড পয়েন্ট ধরে জিপিএর ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে।

বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এই জটিলতা এড়াতে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

মেধাক্রম নির্ধারণের এই বিষয়টি উল্লেখ করে ঢাকার একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুটি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে এসব জটিলতা এড়ানো সম্ভব হতো।”

রাজধানীর নামকরা কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষও মনে করেন কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এসএসসির সঙ্গে জেএসসির ফল বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল। এতে পাবলিক পরীক্ষার সনদের মূল্যায়ন হতো।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু ভর্তি নীতিমালা জারি করেছে তাই এ বিষয়ে তারা নাম-পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার জন্যই জেএসসি পরীক্ষা নেয়া হয়। এছাড়া এই পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেয়া হচ্ছে।”

আর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, “জেএসসির ফলের ভিত্তিতে তারা তো নবম শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে। বিভাগ নির্ধারণের সুযোগ পাচ্ছে।”

নীতিমালা অনুযায়ী, দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে ভর্তির জন্য ১৮ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএসে আবেদন করা যাবে। ১৬ জুন ভর্তির জন্য মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আর বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তি ও টাকা জমা দেয়া যাবে ৩০ জুন পর্যন্ত। ক্লাশ শুরু হবে ১ জুলাই।

শেয়ার করুন