পরে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দেয়া বিবৃতিতে এ বিষয়ে তার সরকারের নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া, ইন্টারনেট থেকে সন্ত্রাসবাদ প্রচারকাজে ব্যবহৃত হাজার হাজার বিষয়াদি অপসারণ এবং বিদেশ থেকে পোস্ট করা এ রকম আরো শত শত বিষয়াদি ব্লক করার কথা তুলে ধরেন।
লেবার পার্টির সাবেক একজন মন্ত্রী ইন্টারনেট সেবাদাতা আইএসপি ও গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার বিষয়ে মত দেন।
হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কিথ ভাজ বলেন, “বিস্কাইবি’র মতো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এবং গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলো চরমপন্থী উপাদানগুলো নেট থেকে সরানোর ব্যাপারে গড়িমসি করছে। যেমন ধরুন, এখনো আপনি চাইলে ইউটিউবে আনওয়ারুল-আওলাকি শুনতে পাবেন।”
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নিয়েও বলেন।
২২ মে মুসলিম উগ্রপন্থীদের হাতে সাউথ লন্ডনের উলভিচে দায়িত্বপালনরত ব্রিটিশ সেনার হত্যার ঘটনায় পার্লামেন্টে সদস্যদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দলের ৬২ জন এমপির প্রশ্নের জবাব ছোট ছোট উত্তরে শেষ করেন।
বিরোধী দলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ডের বক্তব্যের পর পরই ক্যামেরন লিখিত বক্তব্য দেন। পরে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়, আর পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে মাত্র ৮৫ মিনিট।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলি বলেন, উলভিচ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটেনে মসজিদগুলো আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। একই বিষয়ে কথা বলেন আরো কয়েকজন মুসলিম এমপি।
অবশ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধ বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সভাপতি ডেভিড ক্যামেরন চরমপন্থা তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিকেই সমূলে নির্মূলের পক্ষে।
তিনি বলেন, “তারা অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ভাবে মন জয় করে অসুস্থ ও বিকৃত ধারণায় বিশ্বাসী করে কট্টরপন্থায় ধাবিত করছে। যদিও এ কাজে জড়িতরা ব্রিটেনে জন্ম নিয়ে এখানেই লালিত পালিত হচ্ছে।”
মুসলমানদের পক্ষাবলম্বন করছেন না দাবি করলেও জনগণের বিশ্বাস সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখন এই দেশের তরুণরা কট্টর হয়ে উঠে এবং পরবর্তীতে খুনিতে পরিণত হয়, তখন আমাদের সামনে বেশ কিছু কঠিন প্রশ্ন চলে আসে- আসলে আমাদের দেশে হচ্ছেটা কী।”
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েকবার বলতে শোনা যায়- “ইসলাম শান্তির ধর্ম।”
“ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে যারা চরমপন্থা বা কট্টরপন্থার দিকে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে আমরা যেমন তাদের পক্ষ নেব না তেমনি ইংলিশ ডিফেন্স লিগের মতো ইসলাম বিদ্বেষী কোনো গোষ্ঠীর পক্ষেও নই, যারা ইসলাম বিদ্বেষী বিষ দংশনের মাধ্যমে আমাদের শহরে সহিংসতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে,” বলেন ক্যামেরন।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারনেট, কারাগার, সবখানে সব পর্যায়ে চরমপন্থাকে গুড়িয়ে দিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মন্ত্রী, গোয়েন্দা প্রধান নিয়ে গঠিত তার টাস্কফোর্স সন্ত্রাসবাদের প্রজনন বন্ধে দাতব্য বা এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করবে।
এ ছাড়া কট্টরপন্থী তৈরি বন্ধে মাদ্রসাগুলোতে আরো অতিরিক্ত সহায়তাও নিশ্চিত করবে এই টাস্কফোর্স। নজরদারী বাড়ানো হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চরমপন্থী সংগঠন এবং যারা ঘৃণা ও সহিংসতার জন্ম দেয় তাদের উপর।
অবশ্য কিথ ভাজ অভিযোগ করেন, তার কমিটির করা একবছর আগের বিভিন্ন সুপারিশ অবহেলিত রয়ে গেছে।
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে লন্ডনের বিখ্যাত রেড ফোর্ট রেস্টুরেন্টে আলাপকালে সাবেক পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী কিথ ভাজ অবশ্য স্বীকার করেন, তিনি এখনো জানেন না কারা আইএসপি বা সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্টেন্ট সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেবে। কন্টেন্ট যথাযথ কিনা সে বিষয়টিই বা ঠিক করবে কারা সে বিষয়টিও ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
ভাজ বলেন, ‘খুব শিগগিরই’ তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে গুগলের প্রতিনিধির সঙ্গে বসবেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন ভাজের নেতৃত্বাধীন কমিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তার সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, উল্লেখিত ওয়েবসাইট ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ প্রচারকাজে ব্যবহৃত পাঁচ হাজার ৭০০ বিষয়াদি অপসারণ এবং বিদেশ থেকে পোস্ট করা এ রকম এক হাজার বিষয়াদি ব্লক করে দেয়া হয়েছে।