‘আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষের পথে। এ সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। কোনো সেক্টরেই সফলতা অর্জন করতে পারেনি এ সরকার। সরকারের চরম দুর্নীতি আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচিত। শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, ডেসটিনি, কুইক রেন্টালের নামে লুটপাট, পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে সরকার নিমজ্জিত। বর্তমান অবস্থায় এ সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন।
রোববার চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি এলাকার ভিআইপি টাওয়ারে অবস্থিত নিজস্ব বাসভবনে বাংলানিউজের কাছে মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দু’দলের মধ্যে সংলাপ এবং পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার এ অনিয়ম-দুর্নীতি মানুষের দৃষ্টির আড়াল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে চতুর্মুখী আক্রমণ করছে। এ সরকার বিরোধী দলকে দমনের নামে গুম, খুন কালচারে পরিণত করেছে। মানববন্ধনের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও করতে দিচ্ছে না তারা। এরকম আচরণে বুঝা যায়, এ আওয়ামী লীগ সরকার মূলত দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, ‘বিএনপি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। জনগণের ভোটাধিকারে যাতে বিঘ্ন সৃষ্টি না ঘটে, তার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করে আসছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে সংসদে এসে আলোচনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য উল্লেখ করে বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘সংসদে এজেন্ডা ছাড়া আলোচনার সুযোগ নেই এবং তা সিদ্ধান্তেরও সুযোগ থাকে না।’
সংলাপের বিষয়ে বিরোধী দল কোনো শর্ত দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সংলাপের আলোচ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধীদল কোনো শর্ত দেয়নি।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার না অন্তবর্তীকালীন সরকার’ দেশ কোন দিকে যাচ্ছে বাংলানিউজের এমন প্রশ্নে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কথা বলছে তাতেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তাহলে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে বাধা কোথায়?’
এ বর্ষীয়ান নেতা দু’দলের সংলাপের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘দু’পক্ষের সমস্যা সমাধানে সংলাপ হওয়া অতীব জরুরি। তা না হলে দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে দেশ ও জনগণকে ভালবেসে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হওয়া এ সংসদীয় গণতন্ত্র আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে।’
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আপামর জনগণের ভালবাসায় সিক্ত এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দেশের সার্বিক রাজনীতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলে ত্যাগী মানুষের মূল্যয়ন নেই। সকল কিছু অর্থ ও ব্যক্তি পছন্দের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
রাজনীতির এ ধারা থেকে কখনো বের হওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তারপরেও শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন সজ্জন এ রাজনীতিবিদ।