দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে রেহাই পেলো সরকার।
২ জুন রোববার বেতন-ভাতা বাড়িয়ে গেজেট জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ গেজেট গ্রহণ করেন।
সোমবার গেজেট উপস্থানের পর আদালত বলেন, “বিচারকদের বেতন ভাতা নিয়ে মেজর প্রবলেম সমাধান হয়েছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি এখানে শেষ। আর যদি কারো কিছু বলার থাকে, তাহলে তারা আবেদন করবেন। আমরা বিচার করতে বসেছি। সবার কথা শুনবো।”
এরপরও আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, “এটা অত্যন্ত বেমানান। গোঁজামিল রয়েছে। আপিল বিভাগ বলেছেন, ১ জুলাই ২০০৯ থেকে কার্যকর করতে। কিন্তু ২ জুন জারি করা গেজেটে বলা হয়েছে, বেতন নির্ধারণী সুবিধা ব্যতীত ৮ এপ্রিল ২০১৩ তারিখের পূর্বের কোনো বকেয়া আর্থিক সুবিধা প্রদেয় হবে না।”
বিচারকদের বেতন-ভাতা বাড়াতে আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ও ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দু’দফা সরকারকে নির্দেশনা দেন। এরপরও সরকার নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করলে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি এম কে রহমান।
আবেদনের পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, বিচারকদের বেতন বাড়িয়ে ২ জুন রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে ছয়টি স্কেলে সর্বোচ্চ ৩৯ হাজার ছয় শ’ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ছয়শ’ টাকা বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা ৫ বছর পূর্তিতে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায় হিসাবে নির্ধারিত ৪০ হাজার টাকার স্কেল পাবেন।
সর্বোচ্চ ধাপে মোট বেতন ৩৫ হাজার ৬০০ টাকা (২৯০০০-১০০X৬-৩৫৬০০) থেকে বেড়ে ৩৯ হাজার ৬০০ টাকা (৩৬০০-১২০০X৩-৩৯৬০০) হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে ৩৩ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে ৩১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৭ হাজার টাকা, চতুর্থ ধাপে ২৯ হাজার ৭০০ থেকে বেড়ে ৩৪ হাজার ২০০ টাকা এবং পঞ্চম ধাপে ২৬ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৯ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন-ভাতাদি) আদেশ’২০০৯ এর অধিকতর সংশোধন করে বিচারকদের জন্য এ নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন বেতন স্কেল ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
তবে ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে মূল বেতন ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বকেয়া হিসাবে পাওয়া যাবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জুডিশিয়াল সার্ভিসের সার্বক্ষণিক বিচার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রতি বছর পাঁচ হাজার টাকা হারে পোশাক ভাতাও পাবেন। এ সুবিধা ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
এছাড়া জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে আটশ’ টাকা এবং চিফ জুডিশিয়াল বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রতিমাসে সাড়ে চারশ’ টাকা অ্যাপ্যায়ন ভাতা পাবেন এবং তা ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
এছাড়াও চৌকি কোর্টে পদায়িত জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে চৌকি ভাতা পাবেন। সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বা সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা হারে ডোমেস্টিকস এইড অ্যালাউন্স পাবেন। বেতন ছাড়া অন্য সব সুবিধা ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রায়ে বিচারকদের পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্যে জুডিশিয়াল সার্ভিস ‘পে-কমিশন’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এ নির্দেশনার আলোকে ২০০৭ সালের ১৭ জুন ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন’ গঠন করা হয়। এ কমিশন ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল বিচারকদের আলাদা বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্যে সরকারকে সুপারিশ করে।
পে-কমিশনের এ সুপারিশ বাস্তবায়নে আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ও ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দু’দফা সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার পরও বাস্তবায়ন না করায় মাসদার হোসেন মামলার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম পে-কমিশনের সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়নের দাবিতে একটি আবেদন করেন।
এ আবেদনের প্রেক্ষিতে বার বার সময় নিয়ে সর্বশেষ রোববার সরকার বিচারকদের বেতন বাড়িয়ে গেজেট জারি করে।