নানা জটিলতায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা

0
230
Print Friendly, PDF & Email

শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন বিএনপির অন্তত এক ডজন সিনিয়র নেতা। কেউ কিডনি রোগে, কেউ ডায়াবেটিসে। কেউ ফুসফুস ও কেউ হার্টের সমস্যায়। কারও রক্তনালীতে ব্লক, কারও হাড়ে ফ্র্যাকচার। গুলিবিদ্ধ দুই নেতার শরীরে চলছে দফায় দফায় অপারেশন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশ-বিদেশের হাসপাতালে চলছে তাদের ছুটোছুটি। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এমপিসহ অনেকেই এখন অবস্থান করছেন বিদেশের হাসপাতালে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন বিদেশে। শারীরিক নির্যাতন, অতিরিক্ত পরিশ্রম ও বার্ধক্যের কারণে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন নেতারা। নেতাদের অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতি প্রভাব ফেলছে আন্দোলনে। শারীরিক অসুস্থতার মিছিলে সবশেষ যোগ হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট থেকে তাকে ব্যাংকক নেয়া হয়েছে।-মানবজমিন
গলার রক্তনালীর অসুস্থতায় ভুগছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গলার রক্তনালীতে ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান। এরপর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৪ই মে সিঙ্গাপুরে যান মির্জা আলমগীর। সেখানে তিনি সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে ভর্তি হন। তার পারিবারিক সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকরা তার শরীরের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এখনও পর্যবেক্ষণের মধ্যে রয়েছেন তিনি। দলীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসা তার একটি মেজর অপারেশনের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এ অপারেশনটি তিনি আমেরিকা বা বৃটেনে করতে চান। গতকাল তিনি দেশে ফিরেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, দেশে ফিরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে তিনি অপারেশনের জন্য বৃটেন বা আমেরিকা যেতে পারেন।  
ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি এ দু’টি রোগে ভুগছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তাকে বেশির ভাগ সময় যশোরে নিজের বাড়িতে অবস্থান করতে হয়। সর্বশেষ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গত ২১শে মে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান তিনি। তার দেখাশোনার জন্য পরিবারের সদস্যরাও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুল ইসলাম জানান, তিনি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন।
৬ই মার্চ নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম। মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ নজরুল ইসলাম খানকে প্রথমে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে অপারেশনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গুলি অপসারণ করা হয়। কিন্তু মাথায় বিদ্ধ গুলি বের করতে প্রয়োজন ছিল একটি মেজর অপারেশনের। এরপর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে একটি মেজর অপারেশনের পর এখন বিশ্রামে আছেন তিনি। নজরুল ইসলাম খান জানান, মাথায় অপারেশনটি ছিল খুবই জটিল। এখন তিনি অপারেশন-পরবর্তী ব্যথায় ভুগছেন। নেতাকর্মীরা বাসায় ভিড় করলেও তিনি তেমন কথা বলতে পারছেন না। পত্রিকা পড়তে বা টেলিভিশন দেখতেও কষ্ট হচ্ছে। তিনি জানান, এখনও তার পিঠে ও হাতে বেশ কয়েকটি গুলি রয়েছে।
কিডনিজনিত রোগে ভুগছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৩শে মে সিঙ্গাপুর যান তিনি। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে ফুসফুস ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ। সোমবার হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ডা. তামান্না জানান, শওকত মাহমুদের একটি মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তার অবস্থা এখনও ক্রিটিক্যাল স্টেজেই আছে। সোমবার সন্ধ্যায় তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে দ্রুত কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র লাগানো হয়। এরপর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গত রাতে তাকে ব্যাংকক পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার রাতে হাসপাতালে তাকে দেখতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২০০৯ সালে বাসায় সিঁড়ি থেকে পড়ে কোমর ও হাতের জয়েন্ট ভেঙে গিয়েছিল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ এমপির। এরপর চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার অপারেশন হয়। কিন্তু এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে সংসদ সদস্যপদ নিয়ে তিনি স্পিকারের কাছে আবেদন করলে স্পিকার তা অনুমোদন করেন। এখনও তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওদিকে ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় নির্যাতনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয় উচ্চ আদালত। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তিনি। এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী শারীরিকভাবে অসুস্থ। ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাবন্দি থাকাকালে তিনি একবার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছেছিলেন। বর্তমান সরকারের প্রথম দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করতে গেলে চিকিৎসকরা তাকে হার্টের অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বৃটেনে অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিলেও মানবতা বিরোধী অপরাধে মামলায় গ্রেপ্তারের পর আর অপারেশন সম্ভব হয়নি। কারাগারে নেয়ার পর থেকে একাধিকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।  
এছাড়াও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম ও ড. আরএ গনি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হারুনার রশিদ খান মুন্নু বয়সের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন। ড. আরএ গনি স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোকে অংশ নিলেও প্রায় দুই বছর ধরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই অংশ নিতে পারছেন না এম শামসুল ইসলাম। তিনি এখন রাজনীতি ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততা এড়িয়ে পূর্ণ বিশ্রামে রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিচারপতি টিএইচ খান ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন দু’জনই বার্ধক্যের কারণে অসুস্থ। তবে টিএইচ খান উচ্চ আদালতে আইন পেশায় এখনও সক্রিয় আছেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মাঝে মধ্যে বিএনপির ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরও দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীর ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের রোগ মুক্তি কামনায় দেশব্যাপী মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করেছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো।

শেয়ার করুন