বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি নিতে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার নেতা-কর্মীদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হরতালের কারণে গতকাল বুধবার রাজধানীতে মঞ্চ তৈরি, বাজার করা ও নেতা-কর্মীদের স্বাভাবিক চলাচলে তৈরি হয় পদে পদে প্রতিবন্ধকতা।
হরতাল দেওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান স্মরণে গতকালের পূর্বনির্ধারিত আলোচনা সভার তারিখও পরিবর্তন করতে হয়েছে। আলোচনা সভাটি হবে আগামী শনিবার।
আজ বৃহস্পতিবার জিয়াউর রহমানের ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করার কথা আছে। কিন্তু বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সারা দেশে হরতাল করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট।
তবে গতকালের হরতালে রাজধানীর জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক ছিল। হরতাল-সমর্থকেরা আটটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৩ জনকে আটক করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় সাতজনকে সাজা দিয়েছেন।
গতকাল মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, নয়াপল্টন, ধানমন্ডি ও কলাবাগানে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, হরতালের কারণে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। হরতালের কারণে একত্র হয়ে কোনো সভা বা প্রস্তুতিমূলক কোনো কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছে না। কর্মীরা একসঙ্গে কয়েকজন মিলে যে বাজারে যাবে, তা-ও পুলিশের ভয়ে সম্ভব হচ্ছে না। মঞ্চ তৈরির জন্য ডেকোরেটর থেকে বাঁশ ও অন্যান্য সরঞ্জাম আনা যাচ্ছে না। থানা থেকে বলা হয়েছে, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এ জন্য হরতালের মধ্যে কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না।
বিএনপির ঢাকা মহানগরের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধু খাবার বিতরণ করা হবে, তা তো নয়। আরও অনেক কর্মকাণ্ড আছে। কিন্তু হরতালের কারণে এত বড় একটি কর্মসূচি পালনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দলীয় কার্যালয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বলেন, যত সমস্যাই হোক, আজকের কর্মসূচি সফলভাবে করা হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেওয়ার পর মোহাম্মদপুর শহীদ পার্কে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি শুরু করবেন। এরপর রাজধানীর আরও কয়েকটি স্থানে যাবেন। তেজগাঁও, মহাখালীসহ কয়েকটি এলাকায় তিনি খাবার বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
গতকাল মোহাম্মদপুর গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দলীয় নেতারা কোনো কাজ করতে পারেননি। থানা বিএনপির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাসাতেই ছিলেন। তাঁদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল কেন দিল বুঝতে পারলাম না। শহীদ জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে এত বড় কর্মসূচি, অথচ নেতা-কর্মীরা হরতালের কারণে পুলিশের মারমুখী আচরণের মধ্যে কোনো কাজে বের হতে পারছেন না।
মোহাম্মদপুর শহীদ পার্কের সামনে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বললেন, ‘হরতালের সময় তারা বাঁশ নিয়ে মঞ্চ বানাতে আসবে, নাকি গাড়ি বা পুলিশের ওপর হামলা চালাবে, তা বুঝব কীভাবে? এ জন্য এখানে প্রস্তুতিমূলক কোনো কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যা করার কাল (বৃহস্পতিবার) করতে হবে।’
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু যা করার বৃহস্পতিবার পার্কের মধ্যে করতে হবে। সড়কে কিছু করতে দেওয়া হবে না।
ককটেলের জবাবে ফাঁকা গুলি: হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। কয়েকটি মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ছোড়া হয়। এ নিয়ে হরতাল-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোথাও কোথাও পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।
এদিকে হরতাল চলাকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে বিপুল পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
মতিঝিল ও দিলকুশা ব্যাংকপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।
সড়কে প্যান্ডেল করতে দেবে না পুলিশ: ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এমনভাবে কাউকে মঞ্চ তৈরি করতে দেওয়া হবে না। তবে যদি বিএনপি কোনো খোলা মাঠে অথবা কোনো ভবনের ভেতরে বা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান আয়োজন করে, সে ক্ষেত্রে পুলিশ বাধা দেবে না।