ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হরিণমারী গ্রামের দুই বিঘা (৬৬ শতক) জায়গাজুড়ে বেড়ে ওঠা আলোচিত গাছে এবার লাখ টাকার আম পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গাছের মালিক নূর ইসলাম ও আম ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী এমন আশাই পোষণ করেন। বিশাল গাছ ভরে যেভাবে আম এসেছে, তাতে এ প্রত্যাশা তারা করতেই পারেন। তাছাড়া অন্যান্য গাছের তুলনায় এ গাছের আমের দামও বেশি।এক গাছেই লাখ টাকার আম!
নূর ইসলাম ২০১১ সালে তিন বছরের চুক্তিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় গাছটির আম আগাম বিক্রি করেন। ক্রেতা হচ্ছেন একই এলাকার আম ব্যবসায়ী সোলায়মান আলী। তিনি জানান, গত বছর প্রায় ৬৫ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। এবার আরও বেশি টাকার আম বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি। কারণ হিসেবে জানান, গত বছরের তুলনায় এবারে আম বেশি ধরেছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যাপুরি আমের দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্য ওই গাছ দেখতে আসা দর্শনার্থীরা বাজারের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে এ আম কিনে নেন। গাছের মালিক নূর ইসলাম জানান, বিশাল এই গাছে ছোট মেশিন দিয়ে কীটনাশকসহ ওষুধ স্প্রে করা সম্ভব হয় না। ফলে কোনো কোনো দিকে আমের পরিমাণ কম থাকে। আবার কোনো দিকে থাকে অনেক বেশি। এত বড় গাছ তার পক্ষে পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না বলে তিনি বাধ্য হয়ে কম দামে আম আগাম বিক্রি করে দেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যাপক পরিচিতি এনেছে ওই বিখ্যাত গাছে ধরা সূর্যাপুরি জাতের আম। চমৎকার স্বাদ ও গন্ধ, সুমিষ্ট এবং ছোট আঁটিবিশিষ্ট আমটির স্বাদ যিনি একবার পেয়েছেন তিনিই বারবার ছুটে এসেছেন উত্তরের ওইজনপদে। তবে এ আমের চেয়েও আজ বেশি বিখ্যাত হয়ে আছে, ওই আমগাছ। কেবল একটি সূর্যাপুরি আমের গাছই রয়েছে দুই বিঘা জমিজুড়ে। প্রায় দুশ’ বছরের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হরিণমারী গ্রামের ওই আমগাছ। আমগাছের বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশালত্ব। ২০ হাত বেড় ও প্রায় ৬০ হাত উচ্চতা বিশিষ্ট পুরনো গাছটির চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ডালপালা। প্রতিটি ডালের দৈর্ঘ্য ৪০/৫০ হাত করে। বিশাল জায়গাজুড়ে মাটিতে আসন গেড়ে জবুথবু হয়ে বসে থাকা গাছটিকে দেখলে মনে হয় সারি সারি আমগাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দূর থেকে গাছটিকে একটি আমবাগান বলেও ভ্রম হয়।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, শুধু দুই বিঘা নয়, আগে আরও বেশি জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়েছিল এ গাছ। মানুষ না বুঝে আগে ডালপালা কেটেছে। ঝড়েও ভেঙে পড়েছে কিছু ডাল। তবে আশপাশের দশ গ্রামের সবচাইতে প্রবীণ ব্যক্তিটিও গাছটির সঠিক বয়স জানেন না। কেউ বলছেন দেড়শ’, আবার কেউ বলছেন আড়াইশ’ বছর। তবে এলাকার বেশির ভাগ মানুষই একমত যে, গাছটির বয়স কিছুতেই দুইশ’ বছরের কম নয়।
পৈতৃক সূত্রে গাছের মালিক নূর ইসলামের মতে, গাছটি কে লাগিয়েছিলেন তা তিনি জানেন না। দাদার বংশধর থেকে পরিবারের লোকজন জানে জমিসহ গাছটি তাদের। তিনি জানান, ২০১১ সালে তিন বছর মেয়াদে আগাম বিক্রি করা এ গাছ থেকে প্রথম বছর ৫৮ হাজার টাকা, পরের বছর ২০১২ সালে প্রায় ৬৫ হাজার এবং এ বছর আরও বেশি, লাখ টাকার কাছাকাছি আম বিক্রি করবেন ক্রেতা সোলায়মান। একই কথা বলেন, আগাম ক্রেতা সোলায়মান আলীও। তিনি বলেন, আম এবার আগের বছরের তুলনায় বেশি এসেছে এবং এখন তিনি কেজি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে।
আমের মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দশনার্থীর ভিড় বেড়ে গছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আম বিক্রির পরিমাণও। তবে এখনও গাছের সব আমে পাক ধরেনি। এক দেড় সপ্তাহের মধ্যে সব আমে পাক ধরবে বলে জানান সোলায়মান আলী।
বর্তমানে গাছ মালিক নূর ইসলাম জানান, আমগাছ দর্শনার্থীদের কাছ থেকে দর্শনের বিনিময়ে জনপ্রতি ১০ টাকা করে ফি নিচ্ছেন গাছের অন্যান্য খরচ নির্বাহের জন্য। তিনি বেড়া দিয়ে গাছটি ঘিরে রেখেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দর্শনার্থীদের বসার জন্য একটি গোলঘর, একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে গাছটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা হয় বলে জানান জেলা কৃষি কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন।