তারেক বাঁচাও রাজনীতিতে বিএনপি

0
117
Print Friendly, PDF & Email

দেশের চলমান অন্যান্য ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে বিএনপির ‘তারেক বাঁচাও’ রাজনীতির কারনে। ইতিমধ্যে তার জেলা শহর বগুড়ায় হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবেও নেয়া হবে নানা কর্মসূচি।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুর্নীতি মামলায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক আখ্যা দিয়ে তারা। বিএনপির দাবি এ মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, এখনো নেই। তারেককে হেয় করতেই এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দলের এই নেতাকে বাঁচাতে রাজপথ ও আদালতে বিষয়টি নিয়ে যুগপৎ লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। অর্থাৎ বিএনপির রাজনীতি এখন তারেক বাঁচাও কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। এতে অবশ্য দেশের চলমান অন্য ইস্যুগুলো চাপা পড়ে যেতে পারে।

বিএনপি তার নেতাকে বাঁচানোর জন্য এরই মধ্যে তারেক রহমানের নিজ জেলা বগুড়ায় সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে। আর হঠাৎ করে পুরনো মামলায় ইন্টারপোলের রেডি নোটিস জারির পেছনেও রয়েছে ভিন্ন কারণ।

সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকার পরে লন্ডনে তারেক রহমানের হঠাৎ সরব হওয়া এবং সরকার বিরোধী নানা কথাবার্তার কারনেই এই রেড নোটিস জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনই তা তামিল পর্যায়ে যাচ্ছেনা। তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেশে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এদিকে, স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করলে আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে এমনটাই জানালেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান বলেছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে দুদকের কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল না। আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই আদালত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এই আদেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশে নয়। ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক গত রোববার তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন।

এর আগে দুদকের পক্ষে আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল এ আবেদন করেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক মোঃ মোজাম্মেল হক আবেদনটির ওপর শুনানি গ্রহণ করেন। তারেক রহমান এ মামলার ফেরারি আসামি। তার বিরুদ্ধে ইংরেজিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে এ মামলায় আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এ আবেদন করা হয়। ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলা করে দুদক। রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, তারেক রহমান আইন-আদালতের চোখে পলাতক আছেন। স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ না করলে আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার (তারেক রহমানের) বিরুদ্ধে মামলা আছে। আইনানুগভাবে আদালত মামলা পরিচালনা করছে। কিন্তু তিনি আইন-আদালতের চোখে পলাতক হিসেবে আছেন।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, তারেক রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাইরে ছিলেন। কিন্তু এখন অনুমোদন ব্যতিরেকেই চিকিৎসার নামে বিদেশে পলাতক অবস্থায় আছেন। যে কোনো মুহূর্তে তিনি নিজে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করতে পারেন। তা যদি না হয় তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করা যেতে পারে। আদালত যদি মনে করেন তার অনুপস্থিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, আদালত সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তারেক রহমান অসুস্থতার কথা বললেও আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখছি, তিনি বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করে বেড়াচ্ছেন এবং দেশে নাশকতামূলক কর্মকা- করার জন্য তার কর্মী ও শরিক দল জামাত-শিবিরের কর্মীদের ওপর হুকুম জারি করেছেন। তাকে আদালতের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে।

তারেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সংবাদে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও দলের মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে আইনের আওতায় লন্ডন চিকিৎসা নিতে অবস্থান করছেন। আইন মোতাবেক সব কিছু চলছে। তিনি বলেন, সরকার বিষয়টি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এ বিষয়টি রাজনীতিকরণ করা হলে আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। আর আইনে চললে, আইনি পথে আমরা বিষয়টি দেখবো।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের এখন বড় সমস্যা আগামী নির্বাচন কিভাবে করা যাবে। এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে মাঝে মধ্যে সংলাপের কথাও বলা হচ্ছে। এই মূল সমস্যাকে আড়াল করতে সরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

দুদু বলেন, এক এগারোর সময়ে তৎকালীন সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত নেতা আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ নাসিমসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে নিজেদের সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত কোনো মামলা প্রত্যাহার তো করেইনি। উল্টো আরো নতুন নতুন মামলা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ২ দিন আগে তারেক রহমানকে নিয়ে যে ভাষায় কথা বললেন, তার প্রতিফলন দেখলাম কোর্টের দেয়া পরোয়ানায়। তিনি বলেন, তারেক রহমানের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, সেই তারেক রহমানকে বাংলাদেশে সসম্মানে ফিরিয়ে আনতে দেশবাসী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান সম্প্রতি বিএনপির দলীয় এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেন। গত ২০ মে পূর্ব লন্ডনের ওই অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ওপর চাপ দিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এরপর দেশে তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে যা যা দরকার, আদালত সবই করবে।

২০০৭ সালে ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সময়ে নির্যাতনে তারেক রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তিনি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে তিনি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই কাউন্সিলে লন্ডনে ধারণকৃত তার একটি ভিডিও বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের দেখানো হয়। ১/১১-এর পর সেটিই ছিল তার প্রথম বক্তব্য।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। তবে কোনো রাজনৈতিক সভায় অংশগ্রহণ করেননি। প্রকাশ্যে জনসমক্ষে গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের জানাজায়। এছাড়া তিনি প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের ভিড়ে উপস্থিত হননি। গত সোমবার প্রথম হাজির হয়েছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সামনে। অবশ্য কয়েক সপ্তাহ আগে ওমরাহ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে গিয়ে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগদান করেছিলেন।

শেয়ার করুন