মেট্রোরেল প্রকল্প : এ বছর ভিত্তিপ্রস্তর, নির্মাণকাজ ২০১৬ সালে

0
127
Print Friendly, PDF & Email

আলোচিত মেট্রোরেলের বিস্তারিত নকশা ছাড়াই প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হচ্ছে আগামী জুলাই মাসে। এ প্রকল্পে নকশা তৈরি এবং নির্মাণকাজ তদারকির পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর দুই-তিন বছর প্রকল্পটির কাজ হবে কাগজে-কলমে। এর মধ্যে রয়েছে নকশা তৈরি, জমি অধিগ্রহণ, কোম্পানি গঠন, লোকবল নিয়োগ। এসব প্রক্রিয়া শেষে নির্মাণকাজ ২০১৬ সালের আগে শুরু করা যাবে না।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে মেট্রোরেল-মনোরেলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণকাজ শুরু না হলেও আরেকটা নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সুবিধা নিতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন।
জানতে চাইলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৫ জুলাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ নকশা না করেই কীভাবে ভিত্তিপ্রস্তর—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজের শুভ সূচনার জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটা বাংলাদেশে প্রথম এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দাবি করেন, নকশা প্রণয়নের কাজ একদিকে হবে। অন্যদিকে নির্মাণকাজ শুরুর চেষ্টাও চলবে। সব মিলিয়ে ছয় বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক সমীক্ষা, পথ চূড়ান্তকরণ এবং বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন একটি ধাপ। এর পরের ধাপে নির্মাণকাজ। প্রথম ধাপ করবে পরামর্শক এবং দ্বিতীয় ধাপের জন্য দরকার ঠিকাদার। তাই নকশা চূড়ান্ত না করে ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা নির্মাণ শুরুর কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সেখানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৪ একর জমি দিয়েছে। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল উত্তরা থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ বছর দুয়েক আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই দফা পথ পরিবর্তনের কারণে প্রকল্প থমকে যায়। প্রথমবার গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী উড়ালসড়কের কারণে এবং দ্বিতীয়বার বিমানবাহিনীর আপত্তির মুখে পথ পরিবর্তন করা হয়।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের জন্য তৈরি উন্নয়ন প্রস্তাবে (ডিপিপি) মেট্রোরেলের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ঋণ দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। বাকিটা সরকার বহন করবে। ইতিমধ্যে নকশা প্রণয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক হাজার ১৮ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত। মেট্রোরেলের ১১ কিলোমিটার চালু হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। বাকি অংশ হবে ২০২২ সালে। আর ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরুর কথা রয়েছে।
এখন যেসব কাজ হবে: যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরুর আগে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং সরকার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি গঠন করা হবে।
সাধারণ পরামর্শকের কাজ হবে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ ও তদারকি এবং মেট্রোরেল পরীক্ষামূলক চালানো। এই পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চূড়ান্ত দরপত্রে জাপানের ওরিয়েন্টাল ও নিপ্পন কোই এবং ফ্রান্সের সিস্টার নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের পর ২০১৫ সালের মধ্যে বিস্তারিত নকশা তৈরি করা হবে। এই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিধিবিধান ও জনবল কাঠামো এবং চাকরিবিধি তৈরি করার জন্য আরেকটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারদের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—জাপানের ওরিয়েন্টাল ও পেডেকো, স্পেনের এএলজি ও যুক্তরাজ্যের আইএমসি।
তৃতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা।
জাইকার ঋণের মূল শর্ত ছিল মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য শতভাগ সরকার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি করা। ইতিমধ্যে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) করার জন্য জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে আবেদন করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের পথ, স্টেশন: মেট্রোরেলের পথ হচ্ছে—উত্তরা তৃতীয় পর্যায়, মিরপুরের পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম, সংসদ ভবনের দক্ষিণ সীমানা দিয়ে ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত।
ডিপিপিতে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল পুরোটাই হবে উড়ালপথে। বিদ্যমান সড়কের মাঝখানে আড়াই মিটার জায়গা নেওয়া হবে। উচ্চতা হবে মাটি থেকে আট থেকে ১৩ মিটার পর্যন্ত।
মেট্রোরেলের জন্য ১৬টি স্টেশন প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—উত্তরার উত্তর, উত্তরা কেন্দ্র, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয়সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক। স্টেশনগুলোও ওপরে হবে এবং নিচ থেকে লিফট বা চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে যাত্রীদের ওপরে যাওয়ার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
ডিপিপি অনুযায়ী, মেট্রোরেলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করা যাবে। প্রতি সাড়ে তিন মিনিট পর পর একটি ট্রেন চলাচল করবে। ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। চলাচলকারী মোট ২৪টি ট্রেনের প্রতিটিতে ছয়টি বগি থাকবে। প্রতি ট্রেনে ৯৪২ জন বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে পারবে। মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১৩ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হবে।

শেয়ার করুন