ঘরের আগুন নিভিয়েছে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি। রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু ও জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফা দ্বন্দ্ব ভুলে অবশেষে একাট্টা হয়েছেন। বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বিজয়ী করতে তারা একসঙ্গে মাঠে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সিটি নির্বাচন ইস্যুতে নানা কারণে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি আসলেই একাত্ম হচ্ছে কি না এনিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে দলের ভেতরে। দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এক হওয়ার ঘোষণা দিলেও তাদের দুইজনের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমেনি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে যাচ্ছে আগের মতোই। আর এ কারণে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে মহাজোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিএনপি দলীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভুলে আপাতত মিনু ও নাদিম সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রার্থী বিএনপির নেতা বুলবুলের পক্ষে কাজ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। ফলে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনতে একট্টা হয়েছে মহানগর ও জেলা। দলের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত না হলেও নিজেদের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই এবারের রাসিক নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন তারা। বিগত দিনের গাত্রদাহ ভুলে ‘রাজশাহী সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম’-এর ব্যানারে এক হয়ে ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। রাসিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে ‘রাজশাহী সম্মিলিত নাগরিক ফোরাম’। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এম রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও এডভোকেট মাইনুল আহসান পান্নাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে এতে। সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের মুখপাত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, তাদের মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে এবার দলের যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর াপতি মিজানুর রহমান মিনু এবং বিশেষ সম্পাদক ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা এক সঙ্গে মাঠে থাকবেন। রাজশাহী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন তপু জানান, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে হবে না। তাই দলের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু নির্বাচনকে তারা জোটগত বা দলীয় নির্বাচন হিসেবে দেখছেন না। ফলে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দাবির কারণে নাগরিক ফোরামের ব্যানারে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জানা গেছে, এর আগে রাজশাহীর মেয়র হিসেবে ১৭ বছর দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা মিনু। কিন্তু ২০০৮ সালে নির্বাচনে এই পদটি হারায় বিএনপি। ফলে রাজশাহী সিটিতে বিএনপির রাজনীতিও হয়ে যায় কোণঠাসা। গত চার বছরে রাজশাহীতে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে খুব বেশি কঠোর হতে পারেনি। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে এ নিয়েও হতাশা কাজ করছিল। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবার বিএনপি সব দ্বন্দ্ব ভুলে এক কাতারে মিলছে দাবি দলের শীর্ষ নেতাদের। তবে দলের অপর একটি অংশের নেতারা বলছেন, বাইরে একাত্ম হলেও ভেতরে ভেতরে বুলবুলকে ঠেকাতে কাজ করছেন অনেক শীর্ষ নেতাই। কারণ রাজশাহী নগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা চান না তাকে ছাপিয়ে অন্য কেউ বড় নেতা বা মেয়র হোক। তিনি আধিপত্য ধরে রাখতে নানা কৌশলেই হাঁটছেন। সবকাজেই তার ইচ্ছে বা অনিচ্ছার কাছেই হার মানেন দলের স্থানীয় নেতারা। গত সিটি নির্বাচনেও ওই নেতা বুলবুলকে হারাতে কলকাঠি নেড়েছিলেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের প্রার্থী ডা. জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ভূমিকাই রাখছেন না। তিনি প্রভাব টিকিয়ে রাখতে স্থানীয়ভাবে জামায়াতের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করতে আগ্রহী নন বলেও জানা গেছে। তিনি নিজেকে রাজশাহীর জন্য ‘অপরিহার্য’ বলেই জাহির করে চলেছেন। তবে ওই শীর্ষ নেতার এমন লুকোচুরি খেলায় তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের নির্যাতনে গত ৪ বছরে রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি। কিন্তু জামায়াত ঠিকই রাজপথ দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে। তাছাড়া জামায়াতের নিজস্ব ভোটব্যাংক হাতে পাওয়া ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা লিটনকে হারানো সহজ হবে না। এদিকে জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূলত কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপেই মিনু-নাদিমকে হয়তো এক কাতারে দেখা যাবে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জেলা বিএনপির একটি বড় অংশ চায় না বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হোক। এজন্য তারা ভেতরে ভেতরে হাঁটছেন অন্যপথে। সূত্রটি বলছে, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় যাচ্ছে এমনটি ধারণা থেকেও স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা চাচ্ছেন না বুলবুল মেয়র হোক। কারণ বুলবুল মেয়র হলে ওই দুই নেতার প্রভাব খর্ব হয়ে যাবে। এজন্য তারা দলের ভেতরে নানা সন্দেহ ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছেন দিচ্ছেন। ফলে সিটি নির্বাচন ইস্যুতে রাজশাহী মহানগর ও জেলা বিএনপি আসলেই একাত্ম হচ্ছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে দলের ভেতরেই।