শাকসবজি ও ফলমূল সংরণে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার

0
270
Print Friendly, PDF & Email

আমাদের দেশের মানুষ তাদের প্রাত্যহিক চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পায় না। এতে শিল্প খাতের পাশাপাশি কৃষি েেত্রও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

তেলের দাম বারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বেশির ভাগ কৃষকই সেচকাজের জন্য বিদ্যুৎচালিত পাম্প ব্যবহার করেন।

অন্য দিকে এখন দেশে রয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। ফলে যেখানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে সেচনির্ভর বোরো ধান উৎপাদন করতে বিদ্যুতের অভাবে বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের, সেখানে উৎপাদিত ফসল, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি সংরণে হিমাগার ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

খাদ্য উৎপাদন ও সংরণে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল এবং পচে যাচ্ছে হিমাগারে সংরতি সবজি বা অন্যান্য ফলমূল।

পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাবে হিমাগার সঙ্কট তো রয়েছেই। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত কষ্টের ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবে সমস্যা থাকলেও সমাধানের পথ খুঁজতে বসে নেই প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও গবেষকেরা।

গত ২০১১ সালের প্রথম দিকে স্বল্প ব্যয়ে এবং সহজে বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার তৈরির এমনই এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের তরুণ গবেষক সহকারী অধ্যাপক মো: পারভেজ ইসলাম।

মো: পারভেজ ইসলাম জানান, প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও শীত মওসুমে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল উৎপন্ন হয়। তবে বিদ্যুৎস্বল্পতার কারণে এবং হিমাগার স্থাপন অত্যন্ত ব্যয়সাপে হওয়ায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শাকসবজি সংরণে অসুবিধা হয়।

গ্রামাঞ্চলে কৃষকেরা শাকসবজি ও ফলমূল তে থেকে উঠানোর পর অতি দ্রুত বিক্রি করতে বাধ্য হন। আর এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে শাকসবজি ও ফলমূল কিনে নেয় এবং পরে সেই শাকসবজি ও ফলমূল চড়া দামে বিক্রি করে।

অপর দিকে শহরাঞ্চলে ুদ্র ব্যবসায়ীরা এসব শাকসবজিও ফলমূল কয়েক দিন সতেজ রাখার জন্য ঘন ঘন পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু দেখা গেছে, অধিকাংশ েেত্রই তারা এই পানি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করেন। এসব কারণেই বহুদিনের চিন্তা থেকে তিনি এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফল হন।

এ বছরের প্রথম দিকে গৃহীত ওই গবেষণা কাজে তাকে সহায়তা করেছেন ‘পদপে’ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কৃষি ও পরিবেশ বিভাগের পরিচালক ড. শেখ তানভীর হোসেন এবং একই বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার (হর্টিকালচার) সালমা আক্তার।

গবেষণা হয় ঢাকার অদূরে গাজীপুরের ভবানীপুরে অবস্থিত পদপে নার্সারি ও হর্টিকালচার সেন্টারে। পরীামূলকভাবে তারা সেখানে একটি শীতলীকরণ চেম্বার তৈরি করেন। দীর্ঘ দিন পরীা-নিরীার পর গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও ফলের সংরণে আশানুরূপ ফল পান তারা।

হিমাগার তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে মো: পারভেজ ইসলাম জানান, প্রথমে ৯০ সেমি. মাটি গর্ত করে ইট দিয়ে আয়তাকার (দৈর্ঘ্য ১৬৫ সেমি. ও  প্রস্থ ১১৫ সেমি.) একটি মেঝে তৈরি করতে হবে।

মেঝের চার পাশে দ্বিস্তরবিশিষ্ট দু’টি দেয়াল তৈরি করতে হবে যেন তৈরিকৃত স্তর দু’টির মধ্যে পাঁচ ইঞ্চি পরিমাণ ফাঁকা জায়গা থাকে। ফাঁকা স্থানটির নিচের অংশে প্রথমে ছোট ছোট পাথরের টুকরো ও মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে।

অবশিষ্ট ফাঁকা স্থানটুকু নদীর ভেজা বালু দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিতে হবে। কটি ঢেকে রাখার জন্য বাঁশ দিয়ে একটি ঢাকনা বানাতে হবে।

এরপর শুকনো খড় অথবা গোলপাতা দিয়ে কটির চার পাশে একটি দোচালা ছাউনি বানাতে হবে, লক্ষ রাখতে হবে যেন সূর্যের সরাসরি আলো বা তাপ কটির ওপর পড়তে না পারে।

এরপর কটি ঠাণ্ডা রাখতে ঘরের দুই দেয়ালের মাঝে রাখা বালুতে ফোঁটা ফোঁটা আকারে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি দিতে হবে। এ জন্য করে পাশেই ক থেকে একটু উঁচু স্থানে একটি ঢাকনাযুক্ত পানির ট্যাংক বা ড্রাম রাখা হয়। ওই ট্যাংক বা ড্রামের সাথে সংযুক্ত পাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় ধরে ঠাণ্ডা পানি সরবরাহ করতে হয় যাতে দুই দেয়ালের মাঝের বালু সর্বদা ভেজা থাকে। ফলে দুই দেয়ালের মাঝে রাখা ঠাণ্ডা বালু বাইরের গরম তাপমাত্রাকে যেমন ভেতরে যেতে দেয় না তেমনি ভেতরের ঠাণ্ডা তাপমাত্রাকে বাইরে আসতে বাধা দেয়।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, এ পদ্ধতিতে তৈরী করে ভেতরে ও বাইরের তাপমাত্রার মধ্যে প্রায় ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মতো পার্থক্য এবং করে মধ্যে অধিক আর্দ্রতার জন্য শাকসবজি ও ফলমূল দীর্ঘ দিন সতেজ থাকে।

এ ধরনের একটি শীতলীকরণ চেম্বার তৈরি করতে প্রায় ছয় হাজার টাকার মতো লাগে এবং এটাতে ২০০ কেজির বেশি শাকসবজি ও ফলমূল সংরণ করে রাখা যায়। এ ছাড়া প্রতিটি তৈরী করে স্থায়িত্বকাল কমপে পাঁচ বছর।

এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রীষ্মকালে ঢেঁড়স, বেগুন, মরিচ, :পটোল, টমেটো, করলা ও সজনে সংরণের সময়কাল আট দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান মো: পারভেজ।

তিনি বলেন, শীতকালে এ সময়কাল প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ পদ্ধতিতে দেশীয় ফুলও সংরণ করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার তৈরির প্রযুক্তিটি বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষকপর্যায়ে এবং ুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে। প্রযুক্তিটি সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন মো: পারভেজ ইসলাম। ।

শেয়ার করুন