অছাত্রদের নেতৃত্বের কারণে মধুর ক্যান্টিনে ৪ বছর নেই ছাত্রদল

0
217
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্র রাজনীতির প্রাণ কেন্দ্র বলে পরিচিত মধুর কেন্টিনে নেই প্রায় চার বছর। ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই ছাত্রদল সর্বাধিক সময় অনুপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর কেন্টিনে। সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৮ই জানুয়ারী নিজ দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ার পর আর কখনো দলগত ভাবে প্রবেশ করতে পারেনি দেশের এই বৃহৎ ছাত্রসংগঠনটি। এ বিষয়ে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মহিদুল হাসান হিরু কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ডিফারেন্ট নিউজকে জানায়, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় না দেশের এই বৃহৎ ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করুক। কারণ ছাত্রদল ঢাবিতে প্রবেশ করলে সরকার এর ভিঁত কেঁপে যাবে। আমি নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরই ভিসি বরাবর চিঠি দিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার আগেই ২০১২ সালে ১০ই সেপ্টেম্বর আমাদের নিয়মিত চার নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগ নামধারী  সন্ত্রাসীরা মেরে রক্তাক্ত করে দেয়।
২০শে সেপ্টেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়্যারম্যান তারেক রহমান এর জন্মদিনের ঢাবির দোয়েল চত্বরে কেক কাটলে আপনি শারীরিক ভাবে ২ কর্মীকে লাঞ্চিত ও দলীয় কার্যালয়ের সামনে অপমানিত করেন- এমন এক প্রশ্ন লাইন কেটে দেন মহিদুল।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ছাত্রদলের বর্তমান ঢাবি কমিটির সভাপতি, সিনিয়র-সহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা বর্ষ হচ্ছে ১৯৯৬-৯৭। তাদের ছাত্রত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০০১ ও ২০০২ সালে। তারা কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র না, তাইতো তাদের নেতৃত্বে যখন কোনো মিছিল মিটিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে যায়, তখনই তারা বাধার সম্মুখীন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার মতো বৈধ কোনো পরিচয় পত্র না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টিরিয়াল বডি ও পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করে।
অনুসন্ধানে জানাযায় যে, গত হাসান মামুন- ফিরোজ কমিটির পরে কখনই নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো কমিটি গঠিত  হয়নি। তাইতো গত দশ বছরেও কোনো হল কমিটি দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গুলো। হল কমিটি না দেওয়ার ফলে তরুণ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী মেধাবী ছাত্ররা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ছাত্রদল থেকে। প্রকান্তরে ছাত্রলীগের রাজনীতি যেহেতু তারুণ্যে নির্ভর ও বুড়ো হাবরাদের কোন ঠাঁই নেই, তাইতো নতুন ছাত্ররা আকৃষ্ট হচ্ছে তাদের দিকেই বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে এ এফ রহমান হল ছাত্রদল কর্মী জুয়েল হাওলাদার জানান, ছাত্রদল শুধু বিএনপির ভ্যানগার্ড না পুরো জাতির আন্দোলন সংগ্রামের ভ্যানগার্ড। দীর্ঘ আট বছরে আমাদের হল কমিটি না হওয়ায় কর্মীর পরিচয় বহন করেই জেল, জুলুম নির্যাতনের শিকার হলাম। অতিদ্রুত ম্যাডাম খালেদা জিয়ার উচিত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে নজর দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা চাঙ্গা করতে প্রত্যেক আবাসিক হলে নতুন কমিটি দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল ছাত্রদলের এক কর্মী জানায়, আমরা যারা শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী নিয়মিত ছাত্র আছি তারা কখনোই চাচাদের নেতৃত্ব মেনে নিই নি। তাইতো দীর্ঘ এক দশক ধরে আমাদেরকে বঞ্চিত করার জন্য গত কমিটি এবং বর্তমান কমিটি কোন হল কমিটি দেওয়ার সাহস পায়নি। ছাত্রলীগের কমিটিতে যারা আছেন তাদের বয়স যেখানে ২৭ বৎসরে সীমাবদ্ধ কিন্তু আমাদের বর্তমান নেতৃত্ব ঘূনে ধরা ও অস্তিত্ববিহীন, কারণ তারা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র নয়, এ কারণেই আমরা যারা নিয়মিত কর্মী আছি, তারাও ক্যাম্পাস থেকে দূরে আছি, কারণ কর্মী হিসেবে আর কতদিন?  ছাত্রদলের সাংগঠনিক নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেক নিয়মিত ছাত্রদল কর্মীরা জানায়, ঘুনে ধরা নেতৃত্ব ভেঙ্গে দিয়ে, যারা প্রকৃত ছাত্র তাদের হাতেই ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দিলে সাংগাঠনিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। ছাত্রদলের কর্মীদের প্রাণের দাবি এখন ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে তরুণ ও নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হোক।
ছাত্রদলের সমর্থথকরা মনে করেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান বেহাল অবস্থা থেকে সাংগঠনিক অবস্থা চাঙ্গা করতে ও সরকার পতনের আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখার জন্য চল্লিশ উর্ধ্ব যুবনেতাদের হাত থেকে এবং বিএনপির সাবেক ছাত্রনেতাদের রাহুগ্রাস থেকে সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। তাই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার কর্মীর প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া অতিদ্রুত ছাত্রদলের সাংগাঠনিক নেতৃত্বের হাল ধরে ছাত্রদলকে আবার আশির দশকের ন্যায় গঠনমূলক ছাত্রসংগঠন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবে এটাই সবার কাম্য।
ছাত্ররাজনীতি মধুর কেন্টিন ভিত্তিক করতে হলে অবশ্যই বর্তমান ধারা থেকে বেরিয়ে আসা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিএনপির অনেক কেন্দ্রিয় নেতাও।

শেয়ার করুন