‘এলাকার মানুষ মিলে ফরম কিনে আইনে জোর কইরে দাঁড়ায়ে দেলে। জমাও তাঁরা দিয়ে দেছে। তাঁরা কলে তুমার ভোটে দাঁড়াতি হবে।’ গতকাল শুক্রবার সকালে চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে এভাবে বলছিলেন মিনু হাওলাদার (৩৯)। তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ড (২৯, ৩০, ৩১ ) থেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রার্থী হয়েছেন।
২০০৬ সালে নগরের গ্যালাক্স মোড়ে চায়ের দোকান দেন মিনু। দোকানের নাম ‘মিনু-টি-স্টল’। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১২ হাজার ১৪৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। মিনু বলেন, ‘গতবারে এলাকার ভ্যান-রিকশা আলারা পোস্টার ছাপায়ে দিইল। আর একদিন মিছিল করিলো। মাইকিং করিলো দুই দিন। সে আমার কাছেতে টাকা নিইল না। অল্প কয় দিন ভোট চাইলাম। তার পরেও দ্বিতীয় হইলাম। প্রথম যে হইল, সে আমার চাইতে ৫০০-৬০০ ভোট বেশি পাইল।’
এ বছর নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা ছিল না মিনুর। কিন্তু নির্বাচন আসতেই এলাকার মানুষ মিলে তাঁর মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছে। এবারও রিকশা-ভ্যান ও শ্রমজীবী মানুষেরা তাঁর পোস্টার ও চায়ের খরচ বহন করবেন। মাইক ভাড়ার টাকা দেবেন এক আত্মীয়। ‘আমি চা বেইচে খাই। ইলেকশান বড় লোকদের কাম। কিন্তু এলাকার সব লোকরা মিলে আমার জন্যি কাজ করতেছে।’ বলেন মিনু। তিনি আরও বলেন, ‘আমার খাওয়ার কেউ নেই। যেটুক পারব এলাকার মানুষের জন্যি করব। একবার যদি তারা আমারে সুযোগ দেয়।’
মিনুর পাশের চা বিক্রেতা লায়লা হক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, বড়লোকের গেট পার হতি পারিনে। তাই আমাগে দুঃখ-কষ্ট তারা বোঝে না। তাই আমরা মিনুরে বানাব। ও গরিব বলে আমাগের গরিবের দুঃখ বোঝবে। তাই আল্লাহ চালি এবার আমরা মিনুরি জিতেবোই।’ রিকশাচালক মো. রুস্তম আলী শিকদার বলেন, ‘আমি এক বেলা রিকশা চালাব আর এক বেলা ওর (মিনুর) ভোট করব। আর ইলেকশনের সময় যে চা খরচ হয়, তার জন্যি কিছু টাকা দেব।’
মিনুর গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চিড়াপাড়া গ্রামে।