রাজধানীর উদয়ন স্কুলের কিছু ছাত্রীর জামার ফুলহাতা কেটে দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদপত্রে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, পরপুরুষের সামনে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের হাতের কবজি পর্যন্ত ডেকে রাখা ইসলামের বিধানমতে অলঙ্ঘনীয় ফরজ। উদয়ন স্কুলের শিক্ষিকা ছেলেদের সামনে ছাত্রীদের ড্রেসের হাতা কাটার এ ঘটনা শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত হানেনি, বরং এটা ইসলামের একটি অলঙ্ঘনীয় বিধান পর্দা পালনে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর অপরাধ। আল্লামা শফী বলেন, শুধু স্কুল কেন, কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানেরই কোনো যুক্তিতেই কারও ধর্মীয় বিধান ও নিয়ম মানার ব্যাপারে বাধাগ্রস্ত করার অধিকার থাকতে পারে না। আধুনিক বিশ্বও এটা সমর্থন করে না। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে, ভাবাই যায় না।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরও বলেন, বিশ্বে নিরাপত্তা বাহিনীই সবচেয়ে কঠোরভাবে ড্রেস কোড মেনে চলে। এতদসত্ত্বেও ভারতীয় পুলিশ, বিএসএফ ও সেনাবাহিনীতে শিখদের তাদের ধর্মীয় পাগড়ি পরিধানে বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। তিনি বলেন, একটা মুসলিম-অধ্যুষিত দেশে ইসলামের অপরিহার্য বিধান পর্দাকে লঙ্ঘন করে বা পর্দা পালনে বাধা সৃষ্টি করে কোনো ড্রেস কোড প্রচলন করা যায় না। এটা স্পষ্ট ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু নয়। উদয়ন স্কুলের সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা যদি নিজেকে মুসলিম বলে বিশ্বাস করেন, তবে তার উচিত অবিলম্বে তাওবা করে কালিমা পড়ে নেওয়া। কারণ, ইসলামের নির্দেশনা মতে যেকোনো ফরজ বিধানকে অস্বীকার, বাধাগ্রস্ত বা বিরোধিতা করে কেউ মুসলমান রূপে বিবেচ্য থাকবে না।
বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাহবুবা খানম কল্পনা ও প্রধান শিক্ষিকা উম্মে সালমা বেগমের বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, এ ধরনের বর্বর ও জঘন্য ঘটনার বিচার না হলে ইসলামের দুশমনরা এরূপ আরও ঘটনা ঘটিয়ে দেশের সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা বিনষ্টে ষড়যন্ত্র করতে উত্সাহী হবে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরও বলেন, ওই শিক্ষিকা রীতিমতো নারী নির্যাতন করেছেন, উলঙ্গপনাকে উত্সাহী করে নারী জাতিকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। তাই অনতিবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আগ্রহী ছাত্রীদের ফুল হাতা ড্রেস ও হিজাব পরে ক্লাসে আসতে দিতে হবে। স্কুলের ড্রেস কোড যদি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তবে তাতে পরিবর্তন আনতে হবে। তৌহিদি জনতা কোনোভাবেই ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা নীরবে সইবে না।
এ পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের উত্থাপিত ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, হেফাজতের দাবি বাস্তবায়ন হলে দেশে এমন বর্বর আচরণের দুঃসাহস কেউ দেখাতে পারত না। তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা বিধানে অবিলম্বে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে দেশকে সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করুন।