যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে একটি সেনা ব্যারাকের কাছে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলায় এক সৈন্য নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত সন্দেহভাজন দুই হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইসলামি সেস্নাগান দেয়া দুই ব্যক্তির হামলায় ওই ব্রিটিশ সেনা মারা যান। গত বুধবার রাস্তায় প্রকাশ্যে চালানো এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে অভিহিত করেছে দেশটির সরকার। রাজধানী লন্ডনের উলউইচ শহরের জন উইলসন স্ট্রিটে বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এ হত্যাকা- ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম পরে প্রকাশ করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তবে নিহতের পরিবারকে এ হত্যাকা-ের কথা জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় লন্ডনজুড়ে ব্যারাকগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ১২০০ পুলিশ। বিবিসি জানতে পেরেছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের তাদের পোশাকের ব্যাপারে ‘গোপনীয়তা’ (কনসিল) রক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে।
ঘটনার পরপরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বুধবার তার ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করে লন্ডনে ফিরে আসেন। এ হত্যাকা-কে ‘নিশ্চিতভাবে একটি সন্ত্রাসী কর্মকা-‘ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গতকাল সকালে ‘ক্যাবিনেট অফিস ব্রিফিং রুম বা কোবরা কমিটির’ সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন ক্যামেরন।
লন্ডনে ফিরে আসার আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদকে বলেন, ‘পুলিশ জরুরিভিত্তিতে এই ঘটনার আদ্যোপান্ত উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসী যোগসূত্র রয়েছে বলেই দৃঢ়ভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে আগেও প্রত্যক্ষ করেছি এবং আমরা কখনই তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেইনি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জন উইলসন স্ট্রিটে সন্ত্রাসীরা ‘আল্লাহ আকবর’ বলে অতর্কিত ওই ব্যক্তির ওপর হামলা চালায় এবং মাংস কাটার চাপাতি ও ছুরি দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এরপর হামলাকারীরা পালানোর কোন চেষ্টা না করেই উপস্থিত লোকজনকে তাদের ছবি তোলার আহ্বান জানায়।
পথচারীর ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসী রক্তাক্ত চাপাতি হাতে বলছে, ‘ডেভিড ক্যামেরনের কারণে ব্রিটিশ সরকার আরব দেশগুলোতে সেনা পাঠিয়েছে। আমরা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করছি এ লড়াই থামাব না। কারণ মুসলমানরা প্রতিদিন মারা যাচ্ছে।’ ‘চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত’ এই মতাদর্শে বিশ্বাসী বলে তারা জানায়। পথচারী নারীদের উদ্দেশে হামলাকারীরা বলে, ‘আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি আপনাদের এসব দেখতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশগুলোতে নারীরা একই দৃশ্য দেখছেন।’ এ সময় ক্যামেরন সরকারের অপসারণের কথাও বলে তারা।
এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তাদের ছোড়া গুলিতে দু’জনই আহত হয়। হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্সে করে দু’জনকে পৃথক হাসপাতালে নেয়া হয়।
এরপর থেকেই পুলিশের কড়া নজরদারিতে রয়েছে পুরো এলাকা। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার স্যার বার্নাড হোয়ে জানিয়েছেন, এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে কাউন্টার টেরোরিজম কমান্ড তদন্ত শুরু করেছে।
এ হামলার পর উগ্র বর্ণবাদী ‘ইংলিশ ডিফেন্স লীগের (ইডিএল) সদস্যরা উলউইচের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন ইডিএল সদস্যরা।
মুসলিম কমিউনিটিতে আতঙ্ক
এ ঘটনায় দেশটির মুসলিম কমিউনিটিতে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ‘মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেন’ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ইসলামে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কোন স্থান নেই।
একইভাবে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুতফুর রহমান।
এ হত্যাকা-ের পরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে এসেক্সের ব্রেইট্রিতে একটি মসজিদে অগি্নকা-ের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে আটক করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি একটি ছুরি নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন।
কেন্টের জিলিংহ্যামে একটি মসজিদে ক্ষতি করার জন্য একজনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তিনি বর্ণবাদী আচরণ করেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
২০০৫ সালে লন্ডনে পাতাল রেল ও বাসে বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনার পর এই প্রথমবারের মতো দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই বোমা হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হন, আহত হন কয়েকশ’ মানুষ। বিবিসি।