সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থিতার জট খোলার দায়িত্ব এবার নিয়েছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ জন্য নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন জমাদানকারী চার নেতাকে তিনি ঢাকায় ডেকেছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিএনপি প্রধানের গুলশানের কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলবেন। বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য ছাড়াও সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এমএ হককে থাকতে বলা হয়েছিল। পারিবারিক সমস্যার কারণে যেতে পারবেন না বলে সমকালকে জানিয়েছেন এমএ হক।চার মেয়র প্রার্থীকে ডেকেছেন খালেদা
মেয়র প্রার্থী ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি সমকালকে বলেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ঢাকায় যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। আগামীকাল সকালে ঢাকায় যাবেন বলে জানান কাইয়ুম। দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গতকাল বুধবারই ঢাকায় চলে গেছেন দুই মেয়র প্রার্থী। এর মধ্যে দুপুরে বিমানযোগে যান মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন। সকালে সড়কপথে সিলেট ছাড়েন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। আরেক প্রার্থী পদত্যাগী বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী আজ সকালে ঢাকা যাবেন।
বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গত সোমবার সিলেট সফরে আসেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। ওই দিন রাত ও মঙ্গলবার দুপুরে তিনি নগরীর একটি হোটেলে দলের চার মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে একান্তে কথা বললেও তাদের ঐকমত্য করাতে পারেননি। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার দুপুরে বিমানযোগে তিনি ঢাকায় ফিরে যান। এর আগে আরিফুল ও জামান নিজ উদ্যোগে ঢাকায় গিয়ে হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে আসেন।
তাছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর পরই ঢাকায় গিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন মহানগর বিএনপির সভাপতিসহ শীর্ষ ৫ নেতা। ওই সময় খালেদা জিয়া একক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দিলেও সিলেটে এসে তারা এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি।
এর মধ্যে আরিফুল অনুসারীরা তাকে কেন্দ্রের সমর্থন দেওয়ার কথা প্রচার করলে গত ক’দিনে ‘তৃণমূল বিএনপি’ ব্যানারে নেতাকর্মীরা উল্টো এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। মহানগর বিএনপিও জরুরি সভা করে আরিফুল ছাড়া অন্য তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে সমর্থন দিতে কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানায়। শমসের মবিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতেও নাসিম, কাইয়ুম ও জামান একই কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে একজনকে প্রার্থী দিলে অন্যরা সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এ অবস্থায় নিজে কোনো ঘোষণা না দিয়েই শমসের মবিন ঢাকায় ফিরে যান বলে জানা গেছে।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সিংহভাগ নেতাকর্মীই আরিফুলের বিপক্ষে বলে দলীয় সূত্র জানায়। শমসের মবিন তার অনুসারী হিসেবে আরিফুলকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিলে তাকেও অবাঞ্ছিত করা হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরেই তিনি নিজে ঘোষণা না দিয়ে ঢাকায় ফিরে যান বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানান। আগামীকালের বৈঠকেও নাসিম, কাইয়ুম ও জামান তাদের মধ্য থেকে একজনকে দলীয় প্রার্থী দিতে হাইকমান্ডের কাছে আহ্বান জানাবেন। মহানগর বিএনপির এক নেতা সমকালকে বলেন, আরিফুল ইতিমধ্যে দলের পদ-পদবি ছেড়ে দিয়েছেন। তাকে সমর্থন দিলে সিলেট বিএনপির কেউ মেনে নেবে না।
জেলা বিএনপির এক নেতা সমকালকে বলেন, আমরা প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন করে অ্যাডভোকেট জামানকে সমর্থন দিতে কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। কোনোভাবেই আরিফুলকে দলের প্রার্থী হিসেবে মেনে নেব না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে ওই নেতা বলেন, বিগত জোট সরকারের আমলে আরিফুল সবার শ্রদ্ধাভাজন সাইফুর রহমানকে (সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী) বিতর্কিত করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে ইলিয়াস আলী ‘গুম’ হওয়ার পর দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও আরিফুল ব্যতিক্রম।