চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ২ লাখ ৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফততরের মতে, এবার সাড়ে ১৩ লাখ টন ধান আর ৮ লাখ টন চাল পাওয়া যাবে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা মণপ্রতি ১৫০ টাকা মুনাফা করবে। আর এতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা নিট মুনাফা ব্যবসায়ীদের পকেটে যাবে।
জানা গেছে, নওগাঁয় কৃষকের শ্রমের মুনাফা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। ধানের হাট বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এ চক্র। কৃষকরা বলছেন, সরকার ধানের দর বেঁধে দিয়েছে ৭৪০ টাকা মণ, আর চালের মণ ১১৬০ টাকা। এ দরের ধারেকাছেও ধানের দাম নেই। নওগাঁর হাটগুলোতে বি-২৮ ধান ৫৩০ টাকা মণ এবং খাটো -১০ বিকিকিনি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। তবে জিরা বা চিকন ধানের দাম ৬শ’ থেকে ৬২০ টাকা মণ। কৃষকের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে কেনা ধান মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পর সরকারি দরে গুদামে বিক্রি করবে। তখন প্রতি মণ ধানে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মুনাফা লুটবে। এ ক্ষেত্রে মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলছে ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁয় রয়েছে শতাধিক অটো রাইস মিল আর ১২শ হাসকিং ধানের চাতাল। এসব চাতালে ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্য শীর্ষে রয়েছে যমুনা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জেলায় প্রায় দুশ’ কোটি টাকা ধান চাল ব্যবসায়ীদের মাঝে ছড়ানো হয়েছে। হাতেগোনা কিছু ব্যবসায়ীর মাঝে এ টাকা রয়েছে। এর ফলে ধানের বাজার ওইসব ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে সব সময়। সরকারি পর্যায়ে প্রতিবছর খাদ্য সংগ্রহ কমিটির দেখভাল করার দায়িত্ব থাকে। কিন্তু এ কমিটি কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ থাকার ফলে ধানের বাজার থাকে ব্যবসায়ীদের দখলে।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, ধানের বাজারদর নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কখনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারবে না। এর কারণ হিসেবে ওই সূত্র বলছে প্রশাসনের এল আর ফান্ড ও বিজয় দিবসসহ নানা কাজে ধান-চাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে ক’জন শীর্ষ ধান চাল ব্যবসায়ী জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষয়টি দেখভাল করেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। অনেক ব্যবসায়ী এ কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এ অর্থ প্রদান করে থাকেন বলে তারা জানান।