পুঁজিবাজারের উন্নয়নে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ সুদে এক হাজার ২৬৭ কোটি টাকা পুনরর্থায়ন তহবিলের জোগান দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর একই ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি। সংস্থাটি কেবল নিজের জন্যই নয়, শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অনুযায়ী জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের জন্যও একই ধরনের সুবিধা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা পুনরর্থায়ন সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ব্রোকারদের অনুকূলে ১০ শতাংশ হার সুদে পুনরর্থায়ন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে। যেখানে আইসিবিসহ অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংক বা স্টক ব্রোকারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আইসিবি এবং প্রণোদনা স্কিম বাস্তবায়নকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়ন, বাণিজ্যিক ব্যাংক বা অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়া অর্থে স্কিম বাস্তবায়ন করেছে। এতে প্রায় ২৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই টাকা পুনরর্থায়ন স্কিমের আওতায় দেওয়া হলে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। ফলে ওই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে।’
আইসিবি বলেছে, ‘অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নে আইসিবি এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে আসছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে ২০১২ সালের ৫ মার্চ সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এত দিন তা বাস্তবায়নে খুব একটা মনোযোগ ছিল না। তবে মেয়াদের শেষ সময়ে এসে এখন প্রণোদনা বাস্তবায়ন ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো উপায় নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রণোদনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে এক হাজার ২৬৭ কোটি টাকার পুনরর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আইসিবি, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কম্পানি লিমিটেড, অগ্রণী ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও জনতা ক্যাপিটাল লিমিটেড সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের ঋণ পুনঃ তফসিলিকরণ ও আংশিক সুদ মওকুফ করেছে। প্রণোদনা স্কিম অনুযায়ী, এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা পুনরর্থায়ন করার ব্যাপারে সরকার আন্তরিক। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বা এর আগেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে পুনরর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করার সময় পুঁজিবাজারসংক্রান্ত সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। তিনি বলেছেন ‘যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দেওয়া হয়েছিল, তাই তা পূরণ না করলে পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসবে না। পুঁজিবাজারে চলমান তারল্য সংকট অনেকাংশেই আগের ঋণ মন্দ হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য এসব বিষয়ে আশু পদক্ষেপ জরুরি।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মূলত যাদের ১০ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে চিহ্নিত করে প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার গঠিত প্রণোদনাসংক্রান্ত কমিটির হিসাবে এ ধরনের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৯ জন। তবে এদের মধ্যে যাদের শেয়ার ব্যাংকগুলো ফোর্স সেল করেছে, তারা প্রণোদনা অনুযায়ী মার্জিন ঋণের সুদের ৫০ শতাংশ মওকুফ সুবিধা পাচ্ছে না।