একেবারে দেশে না ফিরে, সৌদি বাদশার বিশেষ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৈধ হয়ে এখানে নতুন কোম্পানিতে কাজে যোগ দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।
বুধবার রাতে রাষ্ট্রদূতের নিজ কার্যালয়ে তিনি বাংলানিউজকে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, “এখানকার কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদাপত্র দূতাবাসে জমা পড়েছে। শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে দূতাবাসে এসে অথবা দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে পছন্দমতো কাজে যোগদান করতে পারেন।”
তিনি বলেন, “রিয়াদ দূতাবাস এবং জেদ্দা কনস্যুলেটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাতহাজার প্রবাসী সেবা নিতে আসছে, যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী আসছেন আউটপাস (ছাড়পত্র) নিয়ে একেবারে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য।”
আউটপাস নিতে আসা প্রবাসীদের আউটপাস না নিয়ে বৈধ হয়ে এখানে কাজে যোগদান করার আহবান জানান রাষ্ট্রদুত।
ক্রাইমে জড়িত এমন প্রবাসী ছাড়া সব অবৈধ প্রবাসীরা বিনা জরিমানা এবং বিনা শাস্তিতে বৈধ হতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “শত অপপ্রচার সত্ত্বেও অন্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, “সৌদি বাদশার ঘোষণার পর অনেকে তাদের কোম্পানিতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭০জন দক্ষ কর্মকর্তা সৌদিতে পাঠিয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরো কর্মকর্তা এখানকার শ্রমিকদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আসবেন।”
তিনি বলেন, “গত কয়েকদিনে দূতাবাস থেকে ৪৭হাজার কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হয়েছে। দাম্মামে তিন দিনে দু’হাজার তিনশ’ নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। এছড়া সব প্রবাসীকে এই সেবা প্রদানের মাধ্যমে বৈধ করতে দূতাবাস পুরোপুরি প্রস্তুত।”
সৌদি বাদশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোন সম্বোধনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “সৌদি প্রশাসন থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে বাংলাদেশিদের প্রতি এদেশের নমনীয় মনোভাব আছে।”
আর এ সম্পর্ক কূটনৈতিক যোগাযোগের কারণে সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের দূতাবাসের একটি করে টিম সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করে প্রবাসীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যে সমস্ত প্রবাসীরা এরই মধ্যে নিয়োগকর্তার কাছে পাসপোর্ট রেখে পালিয়ে এসেছেন ওই ধরনের প্রায় ৬৫হাজার পাসপোর্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দূতাবাসে ফেরত আনা হয়েছে।”
এই পাসপোর্টগুলি একটি ডাটাবেজের আওতায় আনার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দিনরাত কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, “নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কত বাংলাদেশি অবৈধ সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা চার থেকে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।”
এই অল্প সময়ে এত লোককে বৈধ করা সম্ভব কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সময় বাড়ানো বা কমানোর এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি কম সময়ের মধ্যে কীভাবে সবাইকে বৈধ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।”m120
শ্রমিকদের বৈধ করার কাজ সৌদি প্রশাসনে এখনো শুরু হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই। রিয়াদে কাজ হচ্ছে কয়েকটি অঞ্চলে তাদের (সৌদি প্রশাসন) মেকানিজমে কিছু সমস্যা থাকায় কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। আবার কিছু অঞ্চলে তথ্য যেতে দেরি হচ্ছে। তাই সেখানকার প্রশাসন কাজ শুরু করতে পারছে না।”
তিনি আরও বলেন, “তারা (সৌদি) কাজ শুরু করলো কি করলো না সেটা দেখার সুযোগ কম। আমাদের কারণে যাতে কোনো শ্রমিক অবৈধ থেকে না যায় সেজন্য দূতাবাস অবিরাম কাজ করে চলেছে।”
ডাটাবেজ তৈরি সম্পন্ন হলে অতি অল্প সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে তার পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
দূতাবাস এবং প্রবাসীদের সার্বক্ষণিক সুখ-দুঃখের সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানান রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম।