বহু কাঙ্খিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন(ডিসিসি) নির্বাচন আটকে গেল দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের কারণে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সীমানা নির্ধারণ সম্প্রসারণ এবং সীমানা পুন:নির্ধারণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গত ২ জানুয়ারি গেজেটের মাধ্যমে তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেলের সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের চরওয়াশাপুর ভোটার এলাকা ছাড়া বাকি সকল এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভূক্ত করে সীমানা সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু এই সুলতানগঞ্জ এলাকাটি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোন ওয়ার্ডে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে তা গেজেটে উল্লেখ করা হয়নি। যার ফলে আবার নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে।
জটিলতার সূত্রপাত যেভাবে
সূত্র জানায়, ডিসিসি দক্ষিণের বর্তমানে মোট ওয়ার্ড ৫৬টি। কিন্ত সুলতানগঞ্জ এলাকার চরওয়াশাপুর ছাড়া ৫৭নং ওয়ার্ড হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক বিন্যাস, ভৌগলিক এলাকা, আবাসন ব্যবস্থা এবং জনসংখ্যার অনুপাতে নবগঠিত ওয়ার্ডসমূহের আয়তন নির্ধারণ করা হয়নি।
এ অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনসার আলী খান স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের কাছে এক চিঠি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়, সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক ১,২,৩নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ৫৫নং, সাবেক ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে সমন্বয়ে ৫৬নং এবং সাবেক ৭,৮,৯নং ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ৫৭নং ওয়ার্ড হিসাবে সীমানা পুন:নির্ধারণের প্রয়জনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
কিন্ত তা আমলে না নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সুলতানগঞ্জ বাদ দিয়ে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠায়। এতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
কিন্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) পর্যালোচনা করে দেখে, সুলতানগঞ্জ বাদ দিলে সিটি কর্পোরেশন আইন’২০০৯ এর ৪/২ অনুচেছদের পরিপন্থী হয়। আইন অনুযায়ী ডিসিসি নির্বাচন করতে হলে সুলতানগঞ্জকে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। তাই সুলতানগঞ্জ এলাকার সাধারণ কোনো ভোটার মামলা করলে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে- সে আশঙ্কায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কথা আমলে নিচ্ছে না ইসি।
জানা গেছে সুলতানগঞ্জে সাবেক ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার। এখন যেন এই সুলতানগঞ্জই ডিসিসি নির্বাচনের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, “এখন দেখছি ডিসিসি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা সুলতানগঞ্জ। রীতিমতো ডিসিসি নির্বাচনে সুলতানগঞ্জই গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বলছে, সুলতানগঞ্জকে বাদ দিয়ে ডিসিসি নির্বাচন করতে। কিন্তু এটা করলে আইনের পরিপন্থী হয় এবং ওই এলাকার ভোটাররা বিধান মতে মামলা করতে পারেন। এতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।”
নির্বাচন কমিশনার বলেন, “এমনিতেই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আস্থাহীনতার কথা উঠেছে। ডিসিসি তফসিল দিয়ে নির্বাচন করতে না পারলে পুরোপুরি আস্থাহীনতায় পড়তে পারে নির্বাচন কমিশন।”
ডিসিসি নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “গত বছর সবকিছু ঠিক রেখে ডিসিসির তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতা সৃষ্টির কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। পূনরায় যেন এ জটিলতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সব কিছু ঠিক থাকলেও আমরা এ নির্বাচন করতে আরো সময় নিতে চাই।”
আইনি জটিলতা নিরসন করে কবে নাগাদ এ নির্বাচন করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আশা করি, তাড়াতাড়ি এ জটিলতার নিরসন হবে। তবে কবে হবে তা নিশ্চিৎ করে বলা যাচ্ছে না।”