সার্ভিস চার্জের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রাহকদের ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
নিয়ম না থাকার পরও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই টাকা কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কথা বলতে চাননি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধূরী বলেছেন, প্রাইম ব্যাংক বিধিভঙ্গ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহক এবং শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সব ধরনের হিসাব থেকে (সঞ্চয়ী, চলতি ও এসএনডি হিসাব) থেকে ‘একাউন্ট স্টেটমেন্ট জেনারেশন চার্জ’ হিসেবে ২০০ টাকা এবং এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ আরো ৩০ টাকা করে মোট ২৩০ টাকা কেটে নিয়েছে।
সারাদেশে ব্যাংকটির ১১৭টি শাখা ও ১৫টি এসএমই শাখায় ১২ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে। সেই হিসেবে গ্রাহকদের ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট বাদ দিলে থাকে ২৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকটি ওয়েবসাইটে দেয়া তালিকায় এ ধরনের কোনো সেবা সূচক বা এই সেবার বিপরীতে কোনো মাশুলের কথা উল্লেখ নেই।
প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল এলাকার কয়েকটি শাখার ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিয়ম না থাকলেও প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তারা এই মাশুল কেটেছেন।
একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, “হেড অফিসের নির্দেশনাটা এমন যে, প্রতিটি একাউন্ট থেকে ২০০ টাকা ও ভ্যাট কাটবেন। যদি কোনো গ্রাহক আপত্তি করে তার টাকা ফেরত দেবেন।”
সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আপত্তি করার মতো গ্রাহকের সংখ্যা খুবই কম হয়ে থাকে। কারণ টাকা কাটার পর অধিকাংশ গ্রাহক তা জানতে পারেন।
প্রাইম ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক কামাল হোসেনের হিসাব থেকে অর্থ কাটার পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংক আমাকে কোনো স্টেটমেন্ট দেয়নি। অথচ আমার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়েছে। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।”
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ব্যাংকটির মতিঝিল শাখার গ্রাহক ইমাম হোসেন।
বিভিন্ন গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ঢাকা শহরের বিভিন্ন শাখায় তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পায়।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাইম ব্যাংকের শাখায় তদন্ত করে দেখা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সব তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটি সব শাখার সব গ্রাহকের হিসাব থেকেই এই পরিমাণ অর্থ কাটা হয়েছে।
কোনো ধরনের আগাম নোটিস ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে এই মাশুল কাটায় ব্যাংকটিকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে বিশদ তদন্ত সাপেক্ষে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগও নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিস্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ষান্মাসিক ভিত্তিতে বছরে দুই বার ব্যাংক তার গ্রাহকের একাউন্ট স্টেটমেন্ট ফ্রি দেবে, এই ধরনের নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম টেলিফোন করলে তিনি অসুস্থতা, ব্যস্ততার কথা বলে ফোন রেখে দেন।
ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইন্টারভিউ বোর্ডে আছেন বলে জানান তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা।
এরপর একাধিকবার টেলিফোন করা হলে ‘তিনি নেই’, ‘অন্য রুমে আছেন’, ‘এখন ব্যস্ত আছেন’ বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়।
প্রাইম ব্যাংকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধূরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত বিভাগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। ৎ
“এই ব্যাংক(প্রাইম) বিধিবহির্ভূত কিছু করলে সেক্ষেত্রেও তাই করা হবে।”