বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে তারা ‘হত্যাকারীকে’ সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যাহার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
তারা অভিযোগ করেন, গত ১৩ মে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিকুল ইসলাম স্ত্রী শেজাদী আপসাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ১৬ মে স্বামী সফিকুলকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শেজাদী আপসা বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের ২৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নরসিংদীর সদর উপজেলার মৃত শাহজাহান মিয়ার মেয়ে।
মামলার বাদী ও শেজাদীর বড় ভাই ডা. মো. জাভেদ সাংবাদিকদের বলেন, “পরকীয়ার জের ধরে আমার বোনকে হত্যা করেছেন সেনাকর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।”
সেনাকর্মকর্তা সফিকুল শান্তি মিশনে লাইবেরিয়া যাওয়ার পর তার তৎকালীন কর্মস্থল হালিশপুরের আর্টিলারি সেন্টারের বাসায় মলি নামের এক নারীর চিঠি পায় আপসা। আপসা বিষয়টি অবহিত করলে সফিকুলকে সেনাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কও করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে ফিরে সে আপসাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে।
“গত ৩০ এপ্রিল আপসা স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের একমাত্র সন্তান আহনাফ ইনতিসার সামিনকে (১০) নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। তবে ৭ মে সফিকুল ও তার ভাইয়ের আশ্বাসে সে স্বামীর বাড়ি ফিরে যায়।”
ডা. জাভেদ অভিযোগ করেন, তার বোন স্বামীর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর আবারো তার উপর নির্যাতন শুরু করে সফিকুল। সফিকুলের ভাই মফিজ উদ্দিন, বন্ধু আব্দুল বাসেত ও ইমদাদুল তাকে নানাভাবে স্ত্রীকে নির্যাতনের প্ররোচনা দিতেন বলেও দাবি করেন তিনি।
২০০৪ সালের অক্টোবরে শান্তিমিশনে লাইবেরিয়া যান সফিকুল। ২০০৫ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মো. আইয়ূবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা নিশ্চিত হয়েছেন ১৩ মে সকালে তাকে মারধর করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
সেনা কর্মকর্তা সফিকুলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইয়ূব বলেন, “আপসার ডায়েরিতে তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। তবে সেটি আপসার হাতের লেখা কি না সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে হত্যা মামলা হলেও গত এক সপ্তাহেও আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডা. জাভেদ। তিনি বলেন, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছে না।
অবশ্য সেনাবাহিনীর কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল জাহিদুল ইসলামকে ঘটনা অবহিত করার পর সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মা জাহানারা জাহান বলেন, আমি মেয়ের হত্যাকারীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
নিহত চিকিৎসকের সহপাঠী ও বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. হোসাইন ইমন সেনাবাহিনী থেকে অভিযুক্ত সফিকুলকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।