বাজেটে ভর্তুকি নিয়ে চাপে রয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আগামী বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে। আর সরকার মনে করে, এসব দাতাসংস্থার পরামর্শ মানলে জনজীবনে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। এ অবস্থায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার। ‘মধ্যবর্তী’ পথ খুঁজে বের করার কাজ করছে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, জাতীয় অর্থনীতিকে ভর্তুকির ‘চাপ’ মুক্ত করতে সরকারের ওপর জেঁকে বসেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক। ভর্তুকির সবচেয়ে বড় বোঝা নিয়ে এখন পথ চলছে সরকার। এ বোঝা অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনার পক্ষে এসব আন্তর্জাতিক সংস্থা। সামনে জাতীয় নির্বাচন। ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে বিগড়ে যেতে পারেন ভোটাররা। এটিও বিবেচনায় রেখেছে সরকার। তবে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ভর্তুকির অংক বেশ স্ফীত হয়েছে। হিসাব মেলাতে ভর্তুকি কমাতে বাড়াতে হয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য। চলতি অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৪৫ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যস্থির করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ২০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন করে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থনীতির বাস্তবতায় ওই অর্থবছর শেষে এ ভর্তুকি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ বছর ভর্তুকির অংকে লাগাম টেনে ধরতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছর ভর্তুকির জন্য রাখা বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকাই রয়েছে জ্বালানি খাতে। কৃষি খাতে ৬ হাজার কোটি, খাদ্য ১ হাজার ৬৩৭ কোটি, রফতানি ২ হাজার ৪০০ কোটি, পাট খাতে ১ হাজার ৭০০ কোটি ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপসহ অন্যান্য খাতে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এনে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।
দাতাসংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশের কাছাকাছি রাখতে হবে। বর্তমানে ভর্তুকির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ভর্তুকির চাপ সামলানো। বিনিয়োগে দুরবস্থা, রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, দুর্বল অবকাঠামো, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহায়ক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি না থাকা, শ্রমিক অসন্তোষ, ভাবমূর্তি সংকট, জ্বালানির আকালসহ নানা ধরনের সমস্যায় রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এর সঙ্গে ভর্তুকির অব্যাহত সংকটকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
ভর্তুকির পরিমাণ সহনীয় রাখার জন্য দাতাসংস্থাগুলো বরাবরই ‘পরামর্শ’ দিয়ে আসছে। এসব সংস্থার কঠিন শর্তে জড়িয়ে পড়ার কারণে ভর্তুকি ‘সহনীয়’ মাত্রায় রাখার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এ জন্য সেবামূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার দায় বহন করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। বিশাল ভর্তুকি সমন্বয়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। দফায় দফায় জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও সিএনজির দাম বৃদ্ধির ফলে নিুবিত্ত, ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনধারণ জটিল হয়ে পড়ছে। জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও গণপরিবহন, রেলের ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে তৈরি হচ্ছে ব্যক্তি পরিসরে আর্থিক চাপ। সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনে সুখবর নেই। মূল্যস্ফীতি উল্লম্ফন, কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনে শংকাসহ অন্যান্য কারণে সরকারের ব্যয় নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ভোটারদের নিজ দলে টানতে বেশ কিছু স্বস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে সরকার।