এসএলজি! সংক্ষেপিত এ নাম শুনে আগ্নেয়াস্ত্র বলে ভ্রম হতে পারে। তবে দেশের শীর্ষ সারির আয়েশি ক্রিকেটারদের কাছে এটি মারণাস্ত্রের মর্যাদাও পেয়ে যেতে পারে! কেন? সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে চলতি প্রেক্ষাপটও বর্ণনার দাবি রাখে।
প্রচার আছে যে ফিটনেস এবং ফিল্ডিং অনুশীলনের ক্ষেত্রে জাতীয় দলের সিংহভাগ ক্রিকেটারই উদাসীন। তবে সেসব নিয়ে বিদেশি কোচরা সচরাচর মুখ খোলেন না। ক্রিকেটারদের ‘অপ্রিয়ভাজন’ হয়ে উঠতে চান না বলে তাঁরা দেখেন এবং নিশ্চুপ থাকেন। তবে একাধিক যন্ত্রাংশের সমষ্টি যে স্পিড লাইট গেট বা এসএলজি, সেটির প্রয়োগ শুরু হলে কোচদের সরব হওয়ারও খুব দরকার নেই আর। কারণ তখন মানুষ নয়, অপ্রিয় তথ্য দেবে যন্ত্র!
অল্প কিছুদিন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকার সময় রিচার্ড পাইবাস যে মেশিনের চাহিদাপত্র দিয়ে যান! একই সঙ্গে এর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন সাহারা-বিসিবি জাতীয় ক্রিকেট একাডেমীর প্রধান কোচ রিচার্ড ম্যাকিন্সও। আর অস্ট্রেলিয়া থেকে হাজার পনেরো ডলার খরচ করে আমদানি করতে করতে এসএলজির প্রয়োজন আরো বেশি উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন শেন জার্গেনসেনও। জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান কোচ ক্রিকেটারদের খুব কড়া কথা বলেন বলে শোনা যায় না।
সেই জার্গেনসেনেরও বর্তমান মনোভাবটা শোনা গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অস্থায়ী কমিটির সদস্য ও গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেনের কাছ থেকে, ‘এখন জার্গেনসেনও একমত যে এরকম একটা জিনিসের ব্যবহার খুব জরুরি।’ এর প্রয়োগের ফলে ক্রিকেটাররাও শৈথিল্য পরিহার করতে বাধ্য হবেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক। খুব স্বাভাবিক কারণ কারো কাছে অপ্রিয় হয়ে ওঠার ভয় মানুষের থাকতে পারে, মেশিনের নিশ্চয়ই নয়!
প্রত্যেকের ফিল্ডিং দক্ষতাও পরিমাপ করতে সক্ষম এসএলজি, ‘বল ধরার ক্ষিপ্রতা কিংবা ধরা আর রিলিজ করার মধ্যে সময়ের যে ব্যাপারটা, কে কেমন করছে, কত সময় নিচ্ছে, প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে করতে পারছে নাকি ঘাটতি আছে- এসএলজি থেকে এসব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন কোচরা।’ যে ধারণার ভিত্তিতে ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ শ্রম নিংড়ে দেওয়ার চাপও দেওয়া যাবে বলে নিশ্চিত গাজী আশরাফ হোসেন।
এসএলজি দেখলে দুই পাশে একাধিক লোহার দণ্ডের সারি বলেই মনে হবে। তবে এর একেকটি দণ্ড অন্য পাশেরটির সঙ্গে লেজারের মাধ্যমে সংযুক্ত। এর মধ্য দিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের অন্তর্গত নানা সক্ষমতা কিংবা দুর্বলতার চিত্র ধরা পড়তে থাকবে এসএলজির সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারে। ক্রিকেট পরাশক্তিগুলো এ প্রযুক্তির সহায়তা অনেক আগে থেকেই নিচ্ছে। এখন জার্গেনসেনরাও একই সুবিধা নিতে পারবেন বলে খুশি গাজী আশরাফও, ‘এখন আমাদের কোচরা কেবল নিজের চোখের ওপরই ভরসা করে থাকেন। কিন্তু ব্যবহার শুরু হলে এসএলজি থেকেই তথ্য-উপাত্ত আকারে প্রত্যেকের বিস্তারিত পেতে থাকবেন।’
একই সঙ্গে প্রত্যাশিত মানে পৌঁছানোর তাগিদও দিতে পারবেন, ‘যাঁর যেখান উন্নতি করার আছে, ফিটনেস ট্রেনার বা ফিল্ডিং কোচ সে বিষয়ে তাঁদের তাগাদা দেবেন। পরবর্তীতে কারো কোনো অগ্রগতি না হলে সেটিও এসএলজিতে ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে কারা কারা উন্নতি করতে পারেনি, সে বিষয়ে বার্তা নির্বাচকদের কাছেও যাবে।’ অফ সিজনে কিংবা জাতীয় দলের খেলা না থাকলে ফিটনেস ধরে রাখার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন অনেক ক্রিকেটার।
এঁদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন গাজী আশরাফ, ‘দেখা যায় দলের সঙ্গে থাকলে ক্রিকেটারদের ফিটনেস এক রকম থাকে। আবার কিছুদিনের বিরতি নিয়ে ফিরে আসার পর দেখা যায় অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে সেই ক্রিকেটারদের হুঁশিয়ার করে দেওয়া যেতে পারে যে কেন এরকম হচ্ছে?’ মাঝখানে একবার সাবেক ট্রেনার গ্র্যান্ট লুডেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নিয়ে এসেছিলেন হার্ট রেট মনিটর নামের একটি বেল্ট জাতীয় জিনিস। ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সময় ক্রিকেটারদের শরীরে যেটি বেঁধে দিতেন তিনি।
তবে সেটির ব্যবহার ছিল একমুখী। এবার চলে এসেছে বহুমুখী ব্যবহারের এসএলজি। অচিরেই জাতীয় দলের পাশাপাশি একাডেমীর ক্রিকেটারদের জন্য এটির ব্যবহার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন গাজী আশরাফ। সে ক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের অনেকের ফিটনেস আর ফিল্ডিং অনুশীলনের আয়েশে এসএলজি ব্যাঘাত তো ঘটাবেই!