বিরোধীদের দমন করতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত

0
118
Print Friendly, PDF & Email

এক মাস সভা-সমাবেশ-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিএনপি ও তাদের জোটের নেতারা বলেছেন, দেশে এমন কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। বিরোধী দলকে দমন করার উদ্দেশ্যেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দাবি করে তাঁরা বলেন, কিছুতেই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। বরং সরকারকেই গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হতে হবে।
সিদ্ধান্তটির নিন্দা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টিও। দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, নাশকতা প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত ‘মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার শামিল।’ জনজমায়েতই বরং যেকোনো নাশকতাকে প্রতিরোধ করতে পারে।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, একজনের অন্যায় ঠেকাতে গিয়ে জনগণের অধিকার হরণ করা যাবে না। প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাম মোর্চাসহ বাসদ নেতারাও।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, পদক্ষেপটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। অতীতে এর চেয়েও অনেক প্রলয়ংকরী প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলেও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কোনো প্রয়োজন হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিরোধী দল যাতে রাজপথে সভা-সমাবেশ করতে না পারে এ জন্যই সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁর অভিযোগ, বাকশালী স্বৈরশাসনের দিকে যাচ্ছে সরকার। আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকার কোনো দল বা সংগঠনকে দমিয়ে রাখতে চাইলে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা দলগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে লেবার পার্টির উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু এ ঘটনাকে ১৯৭২-৭৫ সালের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ও এভাবে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম হাবিব দুলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা জরুরি অবস্থা জারির পূর্বাভাস।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারের অপকর্ম প্রকাশ ঠেকাতে কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করা হলো। এবার সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার কার্যত একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ আবার সুগম করল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশে কি জরুরি অবস্থা চলছে?… উপকূলীয় অঞ্চলের দুর্যোগের কারণে যদি এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়ে থাকে, তা হলে সরকার কেন জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করেনি।’
এদিকে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও বাসদ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, সিদ্ধান্তটি সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ, এটি বরদাশত করা হবে না। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক মোশরেফা মিশু।
এ ছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্যান্য নেতা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর ও সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মবিনুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি ডা. এম এ করিম ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর হুসাইনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা পৃথক বিবৃতিতে সরকারের সিদ্ধান্তটির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা না তোলা হলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলেও তাঁরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

শেয়ার করুন