১৮ বছর বয়সী কাজল। দেখে মনে হয় বয়স আরও কম। ৫০ বছর বয়সী এক আরব ধনকুবেরের সঙ্গে সম্প্রতি ডিভোর্স হয়েছে তার। স্বপ্ন ছিল ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সিরিয়া থেকে আম্মানে আসার পর অর্থসঙ্কটে বিয়ে বসতে হয় ওই আরবের সঙ্গে। বিয়ের বদলে ৩১০০ ডলার পায় তার পরিবার। বিয়ে টেকেনি সাত দিনও। পরিবারকে বাঁচাতে বিয়ে করতে বাধ্য হয় কাজল। টাকার জন্য আর বিয়ে করবে না, অশ্রুসজল চোখে জানায় কাজল। জর্ডানে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু হার্পার বলেন, কমপক্ষে ৫,০০,০০০ সিরিয়ান নারী এ ধরনের বিয়ের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। এত শরণার্থীদের সহায়তা করার মতো সামর্থ্য নেই সংস্থাটির। শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের বেশির ভাগেরই কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় বেঁচে থাকার তাগিদে পয়সার বিনিময়ে দেহ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ‘মানুষ শরণার্থী মেয়েদের ভোগ করতে উদগ্রীব; এর থেকে জঘন্য কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। এটাকে ধর্ষণ বলেন আর পতিতাবৃত্তিই বলেন, সহজ কথায় এটা নিরীহের উপর অত্যাচার’, বললেন হার্পার। গালফ এবং সিরিয়ার মেয়েদের স্বল্পমেয়াদি বিয়ের হিড়িক লেগেছে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই। কাজলের মা মানালের কাছ থেকে জানা গেল এসব বিয়ে কিভাবে হয়ে থাকে। আম্মানে এক এনজিও আছে যার নাম কিতাব-আল-সুন্নাহ, যারা শরণার্থীদের অর্থ, খাদ্য, ওষুধ ছাড়াও বিয়ের নামে বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে। আরবের কিছু ধনী লোকের অর্থ সাহায্যে এনজিওটি চলে। মানাল জানালেন, ‘আমি যখন সাহায্যের জন্য এনজিওতে গেলাম, তারা আমার মেয়েকে দেখতে চাইলো। তারা আমাকে বলল, আমার মেয়ের জন্য স্বামী খুঁজে দেবে।’ কিতাব-আল-সুন্নাহ’র পরিচালক জায়েদ হামাদ বলেন, ‘অনেক পুরুষ তার কাছে আসে যারা বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছে। এটাকে পতিতাবৃত্তি বলা ঠিক না; কারণ বর কনের মধ্যে লিখিত চুক্তির মাধ্যমেই বিয়ে হয়ে থাকে।’ আম মাজেদ নামক ২৮ বছর বয়সী এক সিরিয়ান শরণার্থী নারী সিরীয় মেয়ে আর আরব পুরুষদের বিয়ের ঘটকালী করে বেশ ভাল অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে। মাজেদের কাছ থেকে জানা গেল, কনের খোঁজে থাকা এই পুরুষদের বয়স ৫০ থেকে ৮০’র মধ্যে। তারা সাদা চামড়ার মেয়েদের পছন্দ করে। চোখের মনির রং নিল বা সবুজ হলে তো আরও ভাল। কম বয়সী মেয়েরাই তাদের প্রথম চাওয়া, খুব ভাল হয় যদি ১৬ বছরের নিচে হয়। এ পর্যন্ত ১০০ মেয়েকে বিয়ের নামে বিক্রি করেছে মাজেদ। পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য সে ৭০ ডলার পায় আর বিয়ে পর্যন্ত গড়ালে ৩১০ ডলার। কয়েক দিনের মধ্যে বিয়ে যদি ভেঙেও যায়, সেটা মাজেদের মাথাব্যথা নয়। বর-কনের মধ্যে চুক্তি যেহেতু আছে, কাজেই এটাকে বৈধ বলে আত্মতৃপ্তি নিচ্ছে এই ঘটকেরা।