শুধু আল্লাহকে ডেকেছি, বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারিনি৷ অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা রেশমা সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷ তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন৷
গত ২৪ এপ্রিল ধসেপড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধার হওয়া দিনাজপুরের মেয়ে রেশমাকে সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে সাভার সেনানিবাসে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়৷ ১৭ মিনিট তিনি ছিলেন গণমাধ্যম কমর্ীদের সামনে৷ একটি হুইল চেয়ারে করে সিএমএইচের বারান্দায় নিয়ে আসা হয় রেশমাকে৷ একটি কালচে বেগুনি রঙের চাদরে তার মুখমণ্ডলটি দেখা যাচ্ছিল৷ প্রথমে শত শত ক্যামেরা ও লোকজন দেখে তাকে বেশ লাজুক ও সামান্য উত্ফুল্ল দেখাচ্ছিল৷ মেডিকেল টিমের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর পোশাকে তার দুই পাশে বসে ছিলেন৷ রেশমা বলেন, ভবন ধসে পড়ার পর মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে জ্ঞান হারান তিনি৷ এরপর আর কিছুই মনে নেই তার৷ ঠিক কখন জ্ঞান ফিরেছে নিশ্চিত করে তা না বলতে পারলেও জ্ঞান ফেরার পর তার সঙ্গে থাকা অনেককেই মৃত অবস্থায় দেখেছেন তিনি৷ এ সময় সিএমএইচের সাদা পোশাকধারী নার্স সার্বক্ষণিক তার পেছনে দাঁড়িয়ে মাথার চাদর ঠিক করে দিচ্ছিলেন ও তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন৷ প্রথমে কিছুটা উত্ফুল্লভাব দেখা গেলেও আস্তে আস্তে কিছুটা ভীতি কাজ করছিল তার চেহারায়৷ তবে বেশ সুন্দর লাগছিল রেশমাকে৷ ক্যামেরার লাইটে এদিক-ওদিক বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছিল৷ খুব নিচু স্বরে আস্তে আস্তে তিনি তার কথাগুলো বলার চেষ্টা করছিলেন গণমাধ্যমের কমর্ীদের কাছে৷ বিমর্ষ ও কিছুটা ধীরস্থিরভাবে ১১ মিনিট তিনি গণমাধ্যমের কমর্ীদের প্রশ্নের উত্তর দেন৷ ঢাকা সিএমএইচের সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশফাক আহমেদ তাকে গণমাধ্যম কমর্ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷ তিনি বলেন, এখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ নন এবং বেশ জড়তার মধ্যে আছেন৷ তাই সীমিত সময়ের জন্য তাকে আপনাদের সামনে হাজির করা হল৷ এ সময় ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি কর্নেল আজিজ তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনায় বলেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো, তাকে এখন এন্টিবাইটিক ইনজেকশন দেয়া হচ্ছে৷ কারণ দীর্ঘ দিন তিনি অন্ধকারে ছিলেন৷ খাওয়া-দাওয়া না থাকাতে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে৷ তিনি বলেন, খুব শিগগিরই তাকে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে৷
এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রেশমা বলেন, শুধু আল্লাহকে ডেকেছি, কিন্তু কখনও কল্পনা করতে পারিনি আবার বেঁচে উঠব৷ তিনি বলেন, সে দিন অফিসে গিয়ে তিন তলায় তারা সবাই পিলার ফাটা দেখছিলেন৷ এ সময় স্যারেরা তাদের বলেন, পানির জন্য পিলার ফেটেছে ও কিছু না, তোমরা সবাই কাজ করো৷ এর মধ্যেই অনেকে চিত্কার দিয়ে বলে দৌড়াও বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে, পালাও৷ এরপর মাথায় আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে যাই ও জ্ঞান হারাই৷ তিনি জানান, ঘটনার পর ৪টি বিস্কুট ও পানি খেয়ে ছিলাম৷ তার পাশে অনেকে পানির জন্য চিত্কার করলেও আমি তাদের পানি দিতে পারিনি৷ কারণ সেখানে অনেক অন্ধকার ছিল৷ তিনি জানান, ওপর থেকে উদ্ধারকারীদের আওয়াজে মেশিনের একটি লাঠি দিয়ে আলোর স্থানে ইশারা দেন৷ এরপর তারা আমাকে উদ্ধার করেন৷ তখন আমার সব জামা-কাপড় ছেঁড়া ছিল এবং আমি ভাবি, আমি একটি মেয়ে কিভাবে উপরে যাব৷ তখন উদ্ধারকমর্ীরা আমাকে একটি টর্চ দিলে তা দিয়ে জামাটি পাই এবং তা পরে নেই৷ উদ্ধারের সময় তার নিম্নাঙ্গে কোন কাপড় ছিল না৷ রেশমা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, চাকরির জন্য ২০১০ সালের জুনে সাভারে আসেন৷ প্রথমে একটি ছোট কারখানায় কাজ করেন৷ পরে ২ এপ্রিল রানা প্লাজায় যোগ দেন৷ আর কখনও গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করবে না বলে জানায় রেশমা৷ কথা বলার সময় তার বেশ কষ্ট হচ্ছিল৷ কথার উত্তর দেয়ার সময় তার ব্রেনে বেশ চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল দেখে সেনা কর্মকর্তারা তাকে গণমাধ্যম কমর্ীদের সামনে থেকে নিয়ে যান৷