স্বপ্ন এখন একটাই, ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়: কাকা

0
125
Print Friendly, PDF & Email

হারিয়েই গেছেন কাকা! ব্রাজিলের এই প্লে-মেকারকে নিয়ে একটা সময় ছিল অনেক আশা, অনেক প্রত্যাশা। তারকাখ্যাতিতে তিনি সমকক্ষ ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা লিওনেল মেসিদের। এসি মিলান ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে গিয়েই যেন হারিয়ে গেলেন দৃশ্যপট থেকে। ডাগআউটে বসে থাকতে থাকতে একটা সময় মরচে ধরে গেল ফর্মের। গত দেড়-দুই বছরে রিয়াল কোচ হোসে মরিনহোর দয়া-দাক্ষিণ্যে তাও যে হাতেগোনা কয়েকটি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন, তাতে কাকা ছিলেন তাঁর আগের ছায়া হয়েই। রোনালদো-মেসিদের দাপটে বিস্মৃতপ্রায় এই ব্রাজিলীয় তারকার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছিল ‘ফোর ফোর টু’ ফুটবল সাময়িকী। প্রথম আলো ডটকমের পাঠকদের জন্য ওই সাক্ষাত্কারটির ঈষত্ সংক্ষেপিত অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।

যখন প্রতিষ্ঠা পেলাম…
মাত্র ২১ বছর বয়সে আমি এসি মিলানে সই করি। সাও পাওলো থেকে আমার মিলানে আসার ব্যাপারটি ছিল স্বপ্ন পূরণের মতোই। ব্রাজিলের প্রত্যেক তরুণ ফুটবলারই ইউরোপে খেলার স্বপ্ন দেখে। আমিও দেখতাম। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব এসি মিলানে সই করে আমিও ছিলাম স্বপ্ন পূরণের আনন্দে উদ্বেল। মিলানে আমাকে ‘সোনার ছেলে’ বলে ডাকা হতো। ওই সব এখন কেবলই অতীত। রিয়াল মাদ্রিদে আমি একজন বর্ষীয়ান খেলোয়াড়।

জীবনের আনন্দময় মুহূর্ত…
২০০২ সালে ব্রাজিল যখন পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতল, সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় সময়। আমি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলাম। কিন্তু নিয়মিত খেলতে পারিনি। একটি ম্যাচে কিছু সময়ের জন্য আমাকে মাঠে নামিয়েছিলেন কোচ স্কলারি। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী ওই দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়া ছিল খুব কঠিন। দলে ছিলেন রোনালদোর মতো স্ট্রাইকার।
নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেলেও দেশের বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। ব্রাজিলের হয়ে আমি কনফেডারেশনস কাপ জিতেছি, মিলানের হয়ে জিতেছি চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতির সঙ্গে কোনো কিছুই তুলনায় আসতে পারে না। সেই সুখানুভূতি আমি বাকি জীবনটাও উপভোগ করে যাব।

ফুটবলে সবচেয়ে বাজে দিন…
২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। লিভারপুলের বিপক্ষে এসি মিলান ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লিভারপুল ম্যাচটিতে সমতা ফিরিয়ে আনে। পরে টাইব্রেকারে আমরা হেরে যাই। তিন গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচে কোনো দলের হেরে যাওয়াটাই একটা ভয়াবহ ব্যাপার। এমন একটি অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছিলাম ওই ম্যাচে। ওই রাতটা আসলেই আমাদের ছিল না।

যে কথা হয়নি বলা কখনো…
আমি এসি মিলানকে অত্যন্ত ভালোবাসি। এসি মিলানে খেলার অভিজ্ঞতাটা আমার জন্য সব সময়ই আবেগঘন। আমি এই ক্লাবের ইতিহাসের অংশ—ব্যাপারটি ভাবতে আমার সত্যিই ভালো লাগে। সানসিরোর সমর্থকেরা অতুলনীয়। এই ক্লাব ছেড়ে দিয়েছি, কিন্তু অনেক খেলোয়াড়-কর্মকর্তার সঙ্গেই আমার এখনো যোগাযোগ আছে। আমার অন্তরের অন্তস্তলে এসি মিলানের জন্য জায়গা চিরকালের জন্যই বরাদ্দ হয়ে আছে।

যদি ফুটবলার না হতাম…
আমি খুব ধার্মিক। ফুটবলার না হলে হয়তো ধর্ম-কর্মের দিকেই পা বাড়াতাম। ধর্মযাজক হতাম। খ্রিষ্টধর্মের মহিমা প্রচারে ব্যস্ত থাকতাম। আমি কতটা ধর্মভীরু, তা হয়তো সবাই জানেন। আমি জার্সির নিচে ‘খ্রিষ্টের অনুসারী’ লেখা টি-শার্ট পরি। গোল করে বিধাতাকে ধন্যবাদ দিই।

আমার ছেলেবেলার ‘হিরো’রা…
আমার মা-বাবাই আমার ছেলেবেলার ‘হিরো’। আমাকে বড় করতে সারাজীবন ধরেই তাঁরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। তাঁরা পরিশ্রম করেছেন আমাকে শিক্ষিত করতে। তাঁরা পরিশ্রম করেছেন আমার মুখে ভালো-পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে। আমাকে সব সময় হাসি-খুশি রাখতেও তাঁদের চেষ্টার অন্ত ছিল না। আজ জীবনের এই বেলায় এসে যা পেয়েছি, যা অর্জন করেছি, সব তাঁদের জন্যই।

আমার জীবনের গর্বিত মুহূর্ত…
কার্লো আনচেলত্তি আমার সাবেক কোচ। তিনি একবার মিশেল প্লাতিনির সঙ্গে আমার তুলনা করেছিলেন। ওই তুলনায় আমি অভিভূত হয়েছিলাম। কিছুটা লজ্জাও পেয়েছিলাম। ওটা আমার জীবনের পাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশংসা। মিশেল প্লাতিনি সর্বকালেরই সেরা মিডফিল্ডারদের একজন। তাঁর সঙ্গে আমার তুলনা তো একটা বিশাল পাওয়াই।

যদি এমন হতো…
আমার কাছে যদি অলৌকিক কোনো ক্ষমতা থাকত, তাহলে আমি ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বাদ পড়াটা নিয়ে কিছু করতাম। ২০০৬ সালে ব্রাজিল দলটি ছিল অসাধারণ। দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে গড়া ওই দলটির সেমির আগেই বাদ পড়ে যাওয়াটা ছিল হতাশার। সব ম্যাচই আমরা জিতলাম, কিন্তু ফ্রান্সের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটাতেই হেরে গেলাম।

আমি ফুটবলকে যেভাবে দেখি…
ফুটবল মানুষকে আনন্দ দেওয়ার একটি খেলা হিসেবেই মনে করি আমি। এই খেলাটি খেলেই আমি তারকা হয়েছি। আমার অনেক ভক্ত হয়েছে, অনুসারী হয়েছে। এ খেলাটির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়েই আমি অনেক মানুষকে সাহায্য-সহায়তা করি।

ফুটবলার হিসেবে আমার শেষ ইচ্ছা…
আমি মনেপ্রাণেই চাই ব্রাজিল নিজেদের মাঠে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপটা জিতুক। রিয়াল মাদ্রিদ এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগটা জিতলে খুব আনন্দ পেতাম। ওটা জিততে পারলাম না। একজন ব্রাজিলীয় হিসেবে আমি স্বপ্ন দেখি, মারকানায় ব্রাজিলের ফুটবলাররা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছে বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা। এ মুহূর্তে আমার স্বপ্ন এটিই।

শেয়ার করুন