রোববার সংসদীয় কমিটি, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং পোশাক খাতের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সচিবালয়ে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে এই মজুরি বোর্ড ১ মে থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে।”
তবে এই কমিটিতে সদস্য হিসাবে কারা থাকছেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
শ্রমমন্ত্রী রজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও গার্মেন্ট মালিকরা বোর্ড কার্যকরের তারিখ নিয়ে আপত্তি তোলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ড যখনই নতুন মজুরি কাঠোমো সুপারিশ করুক না কেন, নতুন সেই কাঠামোতে বেতন পরিশোধ করতে হবে ১ মে থেকে।
এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
গত তিন বছরে মূল্যস্ফীতির কারণে ওই কাঠামো পর্যালোচনা করার দাবি জানিয়ে আসছিল শ্রমিক সংগঠনগুলো।
প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৩৬ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও আগের মজুরি কাঠামোই সব কারখানায় ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পোশাক বর্জনেরও হুমকি দেয়া হয়।
এরপর পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে সরকার যার প্রধান করা হয় বস্ত্রমন্ত্রীকে। ঝুঁকিপূর্ণ হলে গার্মেন্ট বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও ইতোমধ্যে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
রোববার সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন মজুরি কাঠামো সুপারিশ করতে বোর্ডের দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।
এই মজুরি বোর্ড নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, শ্রম আইনের অধীনেই সব করা হবে।
তিনি বলেন, “অস্থিরতার ফলে শ্রমিকরা শঙ্কিত হয়ে আছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিরও প্রচেষ্টা চলছে।”
ঝুঁকিপূর্ণ হলেই গার্মেন্ট বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত হলেই তা বন্ধ করে দেয়া হবে।”
দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাক খাতের ওপর বিভিন্ন দিক থেকে ‘আঘাত’ আসছে মন্তব্য করে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমরা যেমন শ্রমিক আন্দোলন মেনে নিতে পারি না, তেমনি শ্রমিকদের স্বার্থও আমাদের দেখতে হবে।”
শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে অস্থিরতা নিরসন, কারখানা চালু রাখা এবং উৎপাদনের স্বার্থে শ্রম আইন অনুযায়ী এই মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অবশ্য বোর্ড ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতারা বোর্ড কার্যকরের সময়ের বিরোধিতা করেন।
এ সময় কেউ কেউ বলেন, কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলেই বোর্ড কার্যকরের তারিখ ঠিক করা উচিৎ ছিল।
এক পর্যায়ে পোশাক শিল্প মালিকসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সম্মেলন কক্ষের বাইরে চারজন মন্ত্রীর পাশে জড়ো হলে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান তাদের নিয়ে রাজিউদ্দিন রাজুর কক্ষে যান।
শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠক শেষ বিজেএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নিয়েছেন। তবে ১ মে থেকে বোর্য কার্যকরের বিষয়টি তারা মানতে পারছেন না।
মজুরি বোর্ড পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেবেন বলেও জানান তারা।
অন্যদিকে ব্রিফ্রিংয়ে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সভাকক্ষে দাঁড়িয়েই মন্ত্রীদের ধন্যবাদ জানান।