পাকিস্তানে ১৪ বছর পর আবারও ক্ষমতায় আসছেন নওয়াজ শরীফ : নির্বাচনে ইমরান খানের চমক, পিপিপির ভরাডুবি : ২৭২ আসনে মুসলিম লীগ ১৩০ পিটিআই ৩৭ পিপিপি ৩৫ অন্যান্য ৭০

0
147
Print Friendly, PDF & Email

পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ জয়লাভ করেছে। ২৭২ আসনের নির্বাচনে তার দল জিতেছে ১৩০টি আসনে। পাকিস্তানের ৬৬টি বছরের ইতিহাসে এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অপর একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যাচ্ছে।
নওয়াজ শরীফ তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই শাহবাজ শরীফ। তবে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ১৩৭টি আসন পায়নি মুসলিম লিগ।
নির্বাচনে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা কাম রাজনীতিক ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি (ন্যায়ের জন্য আন্দোলন বা পিটিআই) অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। গত সংসদে এ দলটির আসন ছিল মাত্র ১টি। তবে এবার দলটি ৩৭টি আসনে জয়লাভ করেছে। ক্যারিশমেটিক নেতা ইমরান খান নিজেও করাচি থেকে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে সদ্যবিদায়ী পাকিস্তান পিপলস পার্টির ভরাডুবি ঘটেছে। পিপিপি পেয়েছে মাত্র ৩৫টি আসন। ফলে পাকিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম এ দলটি এবার সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদাও ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। পিপিপি নেতা সদ্যবিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফসহ পিপিপির বেশিরভাগ মন্ত্রীর শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে।
নির্বাচনে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৭০টি আসনে জয়লাভ করেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। গতরাতে করাচির নিউ টাউনে নিজ বাসভবনের সামনে সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণদানকালে নওয়াজ শরিফ নিজেকে বিজয়ী দাবি করেন। তিনি তার ওপর আস্থা রাখায় দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ যে তিনি পাকিস্তানকে সেবার জন্য আবারও মুসলিম লিগকে সুযোগ দিয়েছেন।’ আজ করাচিতে তিনি দলীয় বৈঠক ডেকেছেন।
তেহরিক-ই-ইনসাফ পরাজয় স্বীকার করে মুসলিম লিগকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ইমরান খান নওয়াজ শরিফকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদ উমর বলেছেন, মুসলিম লিগ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
এর আগে নওয়াজ শরিফ ১৯৯০ ও ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু দু’বারই তাকে উত্খাত করা হয়।
নির্বাচনে পিপিপি মূলত সিন্ধু প্রদেশে, মুসলিম লিগ পাঞ্জাবে এবং পিটিআই খাইবার পাখতুনখা প্রদেশে বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করে।
পাকিস্তানের মজলিসে শূরার ২৭২টি আসনে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাই সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৩৭টি আসন।
মজলিসে শূরার ৭০টি আসন নারী ও অমুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত। নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ করা হয়।
সংরক্ষিত আসন মিলে সংসদের মোট আসন ৩৪২টি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার হয় ১৭২টি আসন।
উল্লেখ্য, বিপুল উদ্দীপনার মধ্যে শনিবার পাকিস্তানে ভোট গ্রহণ হয়। জাতীয় সংসদ বা মজলিসে শূরার পাশাপাশি পাকিস্তানের চারটি প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ভোটগ্রহণ করা হয়।
তালেবানের হামলার হুমকি উপেক্ষা করেই বিপুল সংখ্যক ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হন। ভোটারদের উপস্থিতি এতো বেশি ছিল যে, সারাদেশে এক ঘণ্টা এবং কোথাও কোথাও ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে ভোট নেয়া হয়।
পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ কোটি ৬১ লাখ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৪৪ শতাংশ।
এবার নির্বাচনে করাচিসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। ভোটের দিনে ২৪ জনসহ এবার নির্বাচনী সহিংসতায় ১৫০ জন নিহত হয়েছে।
নানা কারণে করাচির ৪৩টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। বিভিন্ন স্থানে ভোট কারচুপিরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদে ২৯৭টি আসনের মধ্যে ১৮৮টি আসনে এগিয়ে রয়েছে মুসলিম লিগ। সিন্ধু প্রদেশের ১৩০টি আসনের মধ্যে ৬৬টি আসন পেয়েছে পিপিপি। পিটিআই তালেবানের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খাইবার পাখতুনখা প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করে প্রাদেশিক সরকার গঠনের পথে রয়েছে।

শেয়ার করুন