পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। এর মধ্যে সংলাপ, মানবাধিকার পরিস্থিতি, সাভার ট্র্যাজেডি, হেফাজতের ওপর ক্র্যাকডাউনসহ নানা প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে আসে। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সংলাপ চাইলেই হবে না। গত ২৬ বছরেও কোন অর্থবহ সংলাপ হয়নি। মাঠে-ময়দানে বক্তৃতায় সংলাপের কথা বলে বলে কোন লাভ নেই। এই জন্য দরকার কার্যকর উদ্যোগ। এ প্রসঙ্গে তিনি খোলামেলাভাবে একটি প্রস্তাব দেন। বলেন, খালিস নিয়তে সংলাপ চাইলে সংলাপের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একটি চিঠি নিয়ে বিরোধী নেত্রীর বাসায় কিংবা দপ্তরে চলে যেতে পারেন। এর পর দেখি না কি হয়? আব্দুল জলিল বা আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার মতো সংলাপের কোন অর্থ হয় না। ওটা ছিল লোক দেখানো এক তামাশা। মতিউর রহমান বলেন, বিদেশে কি বার্তা যাচ্ছে দেশ সম্পর্কে। এই মুহূর্তে জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা ঢাকায়। তাদের উপস্থিতিতে একদিন হরতাল হয়ে গেল। তাদের আসার দুইদিন আগেও হরতাল ছিল। দেশে সংঘাত লেগেই আছে। মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। শাপলায় মারা গেছে। এর আগে বিভিন্ন জেলায় ৮৭ জন মারা গেছে। দেশে যেন গৃহযুদ্ধ চলছে। তিনি মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দাতাদের উদ্বেগের জবাবে বলেন, জেনেভা বৈঠকে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। দাতারা বেশ কিছু উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এর আগে তার বক্তৃতায় বলেন, পাঁচটি বিষয়ে দাতারা আপত্তি জানিয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেয়ার কথা বলেছেন। যা তোলা সম্ভব নয় বলে বাংলাদেশের পক্ষ তাদের জানানো হয়েছে। ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম শুরুতেই বলেন, দু’টি টেলিভিশন কেন বন্ধ করা হলো? একটি দৈনিক পত্রিকা বন্ধ। তার সম্পাদক কারাগারে। দীর্ঘদিন তিনি অফিসেই কাটিয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতি কেন তৈরি হবে? সরকারের তরফে আমরা কিছুই জানতে পারলাম না। মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে এটা মেনে নেয়া যায় না। ভিন্নমত এভাবে দমনও করা যায় না। হেফাজতের কর্মসূচি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। বলেন, শাপলা চত্বরে কেন তাদেরকে অনুমতি দেয়া হলো? ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মতিঝিলে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিয়ে পল্টন ময়দানেও তো দেয়া যেতো। এমন কি স্টেডিয়ামে নয় কেন? হেফাজতের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকার একেক সময় একেক কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ২রা মে এক সংবাদ সম্মেলনে দফাওয়ারি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অথচ আমাদের সংবিধান কি বলে? আমরা রক্ত দিয়ে সংবিধান এনেছি। হেফাজতের ১৩ দফা দাবি কোনমতেই মানা যায় না। এ দাবিগুলোর সবই সংবিধান পরিপন্থি। শাপলা চত্বরের ক্র্যাকডাউনকে তিনি সমর্থন জানান। বলেন, এভাবে সরকার হটানোর পথ হতে পারে না। সেখানে কত লোক মারা গেছে তা স্পষ্ট নয়। কেউ বলেন ১১। ইকোনমিস্ট বলেছে ৫০ জন। সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক করবো না। লোক কেন মারা যাবে? তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের প্রতি সমবেদনা জানাই। খালেদার আলটিমেটাম সম্পর্কে মাহফুজ আনাম বলেন, এটা নতুন কোন ঘটনা নয়। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তো তারিখ দিয়ে বলেছিল, এরপর সরকার বিদায় নেবে নয়া সরকার আসবে। খালেদা তো সরকার হটানোর আলটিমেটাম দেননি। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, দেশের মানুষ শান্তি চায়। চায় নিরাপদে বসবাস করতে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ির সামনে তো এখন কোন ট্রাক থামে না। এদিক থেকে আমি ভাল আছি। সমাপনী ভাষণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমণি বলেন, পত্রিকা বন্ধ হয়েছে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার জন্য। এর সম্পাদক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ব্লগের রিপোর্টসহ নানা রিপোর্ট ছাপিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন এটা কাম্য হতে পারে না।