শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ তুলে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতেগণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের তিন মাস পর তুলে দেওয়া হল মঞ্চ। সোমবার ভোরেরদিকে পুলিশ গণজারগণ মঞ্চকে ঘিরে ব্যারিকেড তুলে নেয় এবং মিডিয়া সেলসহঅন্যান্য মুক্তমঞ্চ ভেঙ্গে দেয়। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারবিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “আমরা রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্তগণজাগরণ মঞ্চে ছিলাম। ভোর ৫ টার দিকে পুলিশ গণজাগরণ মঞ্চ তুলে দেয় এবংচত্বরের আশেপাশে থাকা মিডিয়া সেলসহ বিভিন্ন মঞ্চ-প্যান্ডেল ভেঙে দেয়।”
তিনি জানান, পুলিশ কোনো কিছু আলোচনা না করে, না জানিয়ে মঞ্চ ভেঙে দেয়।
ইমরানবলেন, “এ গণজাগরণ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মঞ্চ। এটি গড়ে উঠেছেযুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তরুণদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। কোনোউগ্র-ধর্মান্ধ গোষ্ঠীটির দাবিতে যদি এটি ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে এটি নিন্দনীয়ব্যাপার। আমার এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “গণজাগরণমঞ্চ কোনো বস্তুগত মঞ্চ নয়। এটি চেতনার মঞ্চ। এটি ভেঙে দিলে বা সরিয়ে দিলেএটি নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। তরুণদের মধ্য দিয়ে এ মঞ্চ আবারও গড়ে উঠবে।”
মঞ্চভেঙে দেওয়ার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে বৈঠকে বসছে গণজাগরণ মঞ্চেরসংগঠকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে (টিএসসি) তারা বৈঠকেবসবেন বলে জানা গণজারগরণ মঞ্চের মুখপাত্র। সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, , “কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্লগার ও আন্দোলনকর্মীদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরটিএসসিতে বসব। আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন শাহরিয়ার কবির, শ্যামলী নাসরিনচৌধুরী ও আরও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।”
তিনি তরুণদেরমুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান হয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যে কোনো শক্তিকে রুখেদিতে আগের মতোই তৎপরতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “রাতের আঁধারে এ মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হতাশাজনক হলেও তরুণরা বসে থাকবে না জেগে উঠবে। এ মঞ্চ আরও বিস্তৃত হবে।”
এরআগে গণজাগরণ মঞ্চের আরেক সংগঠক মারুফ রসুল মঞ্চ তুলে দেওয়ার বিষয়টিনিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ টিএসসি মুখী বেড়িকেডতুলে নিয়ে যায়। গণজাগরণ চত্বরের মিডিয়া সেল, মুক্তমঞ্চ অবকাঠামো পুলিশভেঙে দেয়।”
৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষীসাব্যস্ত জামায়াতেইসলামির নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিনা দিয়ে যাবজ্জীবন দেয়। ৬টি মামলার মধ্যে ৫টিতে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেফাঁসি না দেওয়ায় এ রায়ের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ব্লগার ওঅনলাইন এ্যাক্টিভিস্টের ব্যানারে তরুণরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়। তারা কাদেরমোল্লাসহ অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানায়।
সময় গড়তেথাকলে ২০-২৫ জনের তরুণের সমাবেশ লাখো মানুষের সমাবেশে পরিণত হয়। আন্দোলনেযোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেয়, একের পর একআন্দোলনে যোগ দেয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। বিভিন্ন গণমাধ্যমশাহবাগের মোড়কে গণজাগরণ মঞ্চ, প্রজন্ম চত্বর, চেতনা চত্বর ইত্যাদি হিসেবেআখ্যায়িত করে।
আন্দোলনকে জোরদার করতে গণজাগরণ মঞ্চের শাখা ছড়িয়ে পড়েদেশের সবখানে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামিও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো বিভিন্ন দাবি যোগ হয়গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে। মূল মঞ্চসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশকয়েকটি সমাবেশ করে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকর্মীরা।
এরপর ২৭ এপ্রিলের রায়ে জামায়াতে ইসলামের আরেক শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
শাহবাগেরআন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরুকরে জামায়াত-শিবিরি কর্মীরা। ২ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে হত্যা করা হয় ব্লগারআহমেদ হায়দার রাজীবকে। গণজারগণ মঞ্চের আন্দোলনকর্মীদের ‘নাস্তিক’ বলেআখ্যায়িত করে অললাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবিরের এ অভিযোগকে প্রত্যাখানকরা হয়।
সর্বশেষ ৫ মে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও সমাবেশের প্রতিবাদেসকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণমঞ্চের কর্মীরা। মঞ্চ গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকির প্রতিবাদে পাল্টা হামলা চালানোরহুঁশিয়ারি দেয়া হয় গণজাগরণ মঞ্চ থেকে। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ভেঙে দেওয়া হলোমঞ্চ।