ব্লগারদের শাস্তি ও নারীনীতি বাতিলসহ ১৩ দফা দাবিতে সরকারকে চূড়ান্ত চাপ দিতে হেফাজত ইসলামীর অবরোধে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজধানী।
রোববার ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথ গুলোয় লাঠি হাতে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে হেফাজত কর্মীরা। তাদের ঠেকাতে বিভিন্ন স্থান ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশও।
১৩ দফা দাবিতে হেফাজতকর্মীরা উত্তার আবদুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ি, বাবুবাজার, পোস্তগোলা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারের আমিনবাজারে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। সকালে বৃষ্টির মধ্যেও তারা অবরোধ চালিয়ে যান।
যাত্রাবাড়ী ও ডেমরায় অবরোধের ফলে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ভোর থেকেই সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হেফাজতকর্মীরা। মোটর সাইকেলের মতো হালকা বাহনও তারা চলতে দিচ্ছে না।
সেখানে সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে। এর একপাশে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা, আর অন্যপাশে হেফাজত কর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছে। পুলিশ মাইকিং করে হেফাজতকর্মীদের ব্যারিকেড পার হতে নিষেধ করছে।
ব্যারিকেডের অন্য পাশে ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে ১৩ দফা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে হেফাজতকর্মীরা।
ডেমরা মোড়েও রয়েছে লাঠি হাতে হেফাজতকর্মীদের অবরোধ। সেখানে কয়েকজনকে দেয়াল থেকে সিনেমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন তারা। হেফাজতের ১৩ দফার দাবির মধ্যে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা বন্ধের দাবিও রয়েছে।
ফজরের নামাজ শেষেই উত্তরার নর্থ টাওয়ারের সামনে থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা হাতে অবস্থান নেয় হেফাজতের কর্মীরা। ফলে ঢাকা ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা টহল দিলেও হেফাজতকে তারা বাধা দিচ্ছে না।
নয়াবাজার সেতু ও সাভারে আমিনবাজারে হেফাজতের অবরোধের ফলে ঢাকা-মাওয়া এবং ঢাকা-আরিচা সড়কেও যান চলাচর বন্ধ রয়েছে।
ভোর থেকেই পোস্তাগোলা এক নম্বর সেতুতে জড়ো হয় হেফাজত কর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ও মাওয়া ফেরিঘাট যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
বাবুবাজার ব্রিজের ওপর থেকে আমাদের প্রতিবেদক জানান, হেফাজত কর্মীরা সেখানে সেতুর দুই পাশে অবস্থান নিয়ে যানবাহন ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
নয়াবাজারে পুলিশ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে হেফাজতকর্মীদের ঢাকার দিকে আসতে দিচ্ছে না। পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জল কামানের গাড়িও প্রস্তুত রয়েছে সেখানে।
সকালে আমিন বাজারে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি চালালেও বিপুল সংখ্যক হেফাজতকর্মী জড়ো হলে আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে মাইকে নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে হেফাজতকর্মীরা।
সকালে সেখানে রিকাশা আরোহী কয়েকজন নারীর সঙ্গে হেফাজতকর্মীরা দুর্ব্যবহার করেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনের কর্মীরা লাঠি ও পতাকা নিয়ে গাজীপুরেও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি পড়ে শুনিয়ে বলেন, এর অধিকাংশ দাবিই পূরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলোও হচ্ছে। এই অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ আখ্যায়িত করে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের নেতারা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
হেফাজত ইসলামের নেতারা বরাবরই তাদের কর্মসূচিকে ‘ধর্মীয়’ বললেও এই গোষ্ঠী রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুতর আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা হেফাজতের কঠোর সমালোচনা করেছেন। যদিও শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃশ্যত তাদের ‘অনুভূতি’র প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনটির সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলিতে সংহতি প্রকাশ করেছে। ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া।
নির্বাচনের বছরে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির ‘রাজনৈতিক তৎপরতা’ ভোটের সাধারণ সমীকরণে প্রভাব তৈরি করতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া শনিবার সরকারকে নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়ায় হেফাজতের অবরোধ নিয়ে রাজনীতিতে কৌতুহলের পাশাপাশি উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে।
হেফাজতের এসব দাবি-দাওয়াকে নারী অগ্রগতির পথে প্রাচীর হিসেবে দেখছেন দেশের প্রধান প্রধান নারী সংগঠনগুলো। ‘নারী-পুরুষের অবাধ প্রকাশ্য বিচরণ’ বন্ধের যে দাবি হেফাজত তুলেছে, তার বিরুদ্ধে ৯ মে নারী সমাবেশের ডাক দিয়েছে প্রধান প্রধান নারী সংগঠনগুলো।