সাভারে ভবন ধসের নবম দিন সকালে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আরওনয়জনের লাশ। এ নিয়ে মোট উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩২ এ। ভারীযন্ত্র ব্যবহার করে দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত উদ্ধারকরা হয়েছে ৪৭জনের লাশ।বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর ১টাপর্যন্ত এ নয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে উদ্ধার হওয়া তিনজনের লাশের একটিখণ্ডিত। এছাড়া আরও ছয়টি লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে দু’জন নারী ও সাতজন পুরুষ। তবে মরদেহগুলো গলে-পচে এমনভাবে বিকৃত হয়ে গেছে যে চেনা কঠিন।
সকালেউদ্ধার হওয়া ছয়জনের লাশ প্রথমে সাভার অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়।কিছুক্ষণ পর এখান থেকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক)মর্গে। দুপুরে উদ্ধার করা লাশ দু’টি অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়েছে।সব মিলে ভবন ধসের নবম দিন পর্যন্ত জীবিত ও মৃত মিলে উদ্ধার করা হয়েছে দুই হাজার চারশ ঊনসত্তর জন। এর মধ্যে জীবিত ২৪৩৭ এবং মৃত ৪৩২জন।বৃহস্পতিবার সকালে এক প্রেস বিফিংয়ে জিওসি চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী এ সব তথ্য জানান।বর্তমানে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকারীরা ক্রেনসহ আরও অন্যান্য ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে।দ্বিতীয়পর্যায়ের অভিযান হিসেবে অভিহিত এ ধাপের উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেসেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনে প্রকৌশল বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও রেডক্রিসেন্ট।সহযোগিতা করছেন আনসার, ৠাব ও পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা।মঙ্গলবারসকালেও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে আপনজনের মরদেহ বুঝে নিতে অপেক্ষা করেন শোকাহতস্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করাহচ্ছে মরদেহ।
উল্লেখ্য, রোববার রাত দশটার দিকে জীবিত চারজনকেউদ্ধারের প্রাথমিক প্রচেষ্টা হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের কারণে ভেস্তে গেলেকর্তৃপক্ষ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উদ্ধার কাজ পরিচালনার সিদ্ধান্তনেয়।ওই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকা নারী গার্মেন্টস শ্রমিক শাহানাকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যায়ে ছিল।এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএসপিআরের রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর রোববার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয় উদ্ধার কাজে ভারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার।
তবেআগের অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে ব্যাঘাত ঘটে উদ্ধারকাজ। ফায়ারসার্ভিস কর্মীদের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে আবার পুরোদমে শুরু হয়উদ্ধার অভিযান।এদিকে, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আরেক দফা আগুন লাগলেও সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনে উদ্ধারকর্মীরা।ইতোমধ্যেরানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ওই ভবনের মালিক, মালিকের বাবা, ভবনেঅবস্থিত কারখানাগুলোর মালিক ও সাভার পৌরসভার প্রকৌশলীসহ ১০ জনকে গ্রেফতারকরা হয়েছে।
রোববার দুপুরে বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয় ভবনের মালিকসোহেল রানাকে। আর সোমবার দুপুরে রানার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কলু খালেককেগ্রেফতার করা হয় রাজধানীর মগবাজার থেকে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে।
সাভারপৌর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনেরপ্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিকস, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকেরদোকানের পাশাপাশি তৃতীয়তলা থেকে ওপরতলা পর্যন্ত ছিলো গার্মেন্টস কারখানা।এগুলোতে কাজ করতেন কয়েক হাজার শ্রমিক।