হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা আহমদ শফী বলেছেন, ‘ক্ষমতা দখল করা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ১৩দফা দাবির বাস্তবায়ন।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘নেত্রী’ সম্বোধন করে আল্লামা আহমদ শফী বলেন,‘নেত্রী এখনো বলছি আমাদের ১৩ দফা দাবি মেনে নিন। এই ১৩ দফা দাবি জাতীয় সংসদে তুলেন।আমাদের সঙ্গে কারো কোনো আঁতাত নেই।’ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় মসজিদ জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত শানে রেসালত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।আল্লামা আহমদ শফী বলেন,‘আমরা জীবন দিয়ে দ্বীন ও ধর্মের জন্য জিহাদ করে যাব। দ্বীন ও ধর্ম না থাকলে আমাদের বেঁচে থেকে লাভ নেই।’সমাবেশ শেষে আল্লামা আহমদ শফী দেশ ও জাতির জন্য মোনাজাত করেন। সাভারে ভবন ধসে নিহত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন তিনি।এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় এ সমাবেশ। জমিয়াতুল ফালাহ ময়দান পরিপূর্ণ না হলেও পুলিশকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে মসজিদের সামনের রাস্তা দখল করে লাঠি হাতে টহল দেয় হেফাজতের কর্মীরা।মোনাজাতে আল্লামা আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আল্লাহের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, ‘ হে আল্লাহ একজন মুসলমান হিসেবে নেত্রীকে কবুল করে দেন। উনাকে তৌফিক দান করুন, যাতে আমাদের ১৩ দফা দাবি মেনে নেন।’ নাস্তিকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা কমিউনিস্টদের দেশ না। এটা আল্লাহর দেশ।নাস্তিকরা এদেশ ছেড়ে চলে যাক। তাদের মাটির নিচে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আল্লাহর সঙ্গে নাফরমানি করে তারা কোনো দেশে থাকতে পারবে না। তাদের উপর আল্লাহর কোনো নিয়ামত থাকবে না।’আল্লামা আহমদ শফী বিকাল ৪টা ৫৭ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে পাঁচটা ৮মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে মহাসমাবেশ শেষ হয়।
১৩ দফা দাবিতে আয়োজিত এ মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মুহিবউল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক আল মাদানী, মাওলানা মোহাম্মদ ইছহাক, মাওলানা শাহজাদুর রহমান, জাফর উল্লাহ খান, আবদুর রহিম, মাওলানা সেলিম, মুফতি মাহফুজুর রহমান, মুফতি মিজানুর রহমান সৈয়দ, মাওলানা ইনামুল হক, সালাহউদ্দিন নানুপুরী, সাখাওয়াত হোসেন, আশরাফ আলী নেজামপুরী, ড. আ ফ ম খালেদ হোছাইন, আবদুল্লাহ রফিক, মাওলানা ইছা সাহেবী, মুফতি হুমায়ুন শামসুদ্দিন প্রমুখ।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মুহিবউল্লাহ বাবুনগরী বলেন,‘নাস্তিক-মুরতাদ এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে তারা ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারিয়েছে।’ সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে। মদীনা সনদ অনুযায়ী দেশ চললে আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না।কেননা ইসলাম নারী নেতৃত্ব কবুল করে না।’ সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘৫মের অবরোধে সরকার যেখানে যেভাবে বাধা দিবে, সেভাবে প্রতিরোধ করা হবে। সরকার বাধা দিলে আপনারা সেখানেই তসবি-জায়নামাজ-মেসওয়াক নিয়ে বসে থাকবেন।’ জুনায়েদ বাবুনগরী আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন এবং আমার দেশ চালু ও প্রেস খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।মহাসমাবেশে আরেক বক্তা আশরাফ আলী নেজামপুরী বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করে হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব দাবি মানা না হলে এক দফা দাবির আন্দোলন শুরু হবে।’
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমকে গ্রেপ্তার করা হলে না চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।আরেক বক্তা আজিজুল হক আল মাদানী ২৪ঘণ্টার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অপসারণ করার দাবি জানান।মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘যারা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তাদের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে।` সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা সেলিম বলেন, ‘বিয়ের আগে নারীর দায়িত্ব নিতে হবে পিতাকে, বিয়ের পর স্বামীকে। পিতা ও স্বামী দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে নারীর দায়িত্ব নিতে হবে। আর সরকারও যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে পর্দা সহকারে নারীরা চাকরি করতে পারবে।’ মহাসমাবেশে অন্যান্য বক্তারাও সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান।এর আগে সকালে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ও হেফাজত নেতা আ ন ম আহমদ উল্লাহ’র পরিচালনায় সমাবেশ শুরুর দিকে সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম শাখার নেতা মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা ইলিয়াছ উছমানী, হাজী মোজাম্মেল হক, মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুছ, মাওলানা ইয়াছির মুহাম্মদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।এসময় বক্তারা ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি সরকারের বিষেদাগার করে বক্তব্য দেন। এছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ও সুলতানা কামালসহ বিভিন্ন নারীনেত্রীদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতারা।সমাবেশে হেফাজতের একনেতা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমালোচনা করে বলেন, ‘মহিউদ্দিন চৌধুরী নাস্তিক-মুরতাদদের পক্ষ নিয়েছেন।’
(রুপশী বাংলা নিউজ)২৬ এপ্রিল /২০১৩.