সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজার ধ্বংস্তুপের নিচ থেকে ২৯০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬২টি মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এছাড়া হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ২০টি মরদেহ।হস্তান্তরের অপেক্ষায় ২০টি লাশ এখন সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় এবং এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারটা পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে স্থাপিত ঢাকা জেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
লাশ হস্তান্তর গণনার কাজে নিয়োজিত সাভার থানার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউল্লাহ রেজা বলেন,“ শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ ২৭৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৫৬টি লাশ আমরা হস্তান্তর করা হয়েছে এবং হস্তন্তরের অপেক্ষায় আছে ২০টি লাশ। এছাড়া যেসব লাশের বেশি গন্ধ বের হচ্ছে এরকম ২৬টি লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে পাঠানো হয়েছে।” তবে অপেক্ষমান স্বজনের চেয়ে লাশের সংখ্যা অপ্রতুল বলে জানা গেছে। অনেক স্বজন তাদের ফিরে পেতে স্ব-প্রণোদিতভাবে অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজের দেওয়ালে নাম ঠিকানা টানিয়ে রেখেছে।স্বজনের আহাজারি ও কান্না শোকাহত সবাই। অনেক স্বজন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে মূর্ছা যাচ্ছে বার বার।এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী জানান, শুক্রবার পর্যন্ত জীবতদের উদ্ধার অভিযান চলবে। তারপর জীবিত আর কারো আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই শুক্রবারের পর থেকে কেবল লাশ উদ্ধার অভিযান চলবে।
এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা।পরিচয় সনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে।এখনও ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।
এর আগে দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টার দিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীপ্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন(অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, স্থানীয় সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদ।বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সাভারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।শুক্রবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো উদ্ধার করা হয়েছে জীবিত প্রায় ২ হাজার জনকে। তাদের মধ্যে সাড়ে সাতশ’ আহতকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ধসে পড়া ভবনটির মালিক স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা স্তুপের নিচে আটকে ছিলেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হলে তিনি পুলিশের সহায়তায় এলাকা ত্যাগ করেন।তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রানা প্লাজার প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিপণী বিতান এবং তৃতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা ছিলো। এগুলো হলো- নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড। এসব ফ্লোরের পাঁচটি কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। নবম তলার নির্মাণ কাজ চলছিল।ভবনটির দোকান মালিকরা অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার ভবনটির ৩য় তলার পিলার এবং সিলিংয়ে ফাটল ধরলেও মালিক পক্ষ ভেতরে সাংবাদিকসহ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি।দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান সভারে। এর ফলে ঢাকা-আরিচা মহা্সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের জোর করে পোশাক কারখানায় নেওয়া হয়েছিল।তারা ভবনের ভেতরে প্রথমে ঢুকতে চাননি। কারণ আগের দিনই ভবনটির পিলার ধসের ঘটনা ঘটে। ভবনধসের পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন-এ যেন আপনজন উদ্ধারের আন্তরিক প্রয়াস।খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দমকল বাহিনীর ১০টি ইউনিট। উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্য।সকালে ভবনধসের পরপরই আটকেপড়াদের বাঁচার আকুতি, বুকফাটা চিৎকারে মর্মস্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধসেপড়া ভবনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়েছিল একেকটি হাত-পা।জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন কেউ কেউ।অনেকের হাত-পা আবার নিস্তেজ।এদিকে ভবন ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে জাতীয় শোক পালন করা হয়েছে।
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবনে এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়। তবে ছুটি ঘোষণা করা হয়নি।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক পালনের এ ঘোষণা দেন।এর আগে গত নভেম্বর মাসে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়।(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৬ এপ্রিল /২০১৩.