অধরচন্দ্রে লাশের হাট!

0
227
Print Friendly, PDF & Email

সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এখন হয়ে উঠেছে লাশের হাটসারি সারি লাশ রাখা হয়েছে মাঠজুড়েআর নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে অধরচন্দ্র এলাকার আকাশ-বাতাসরাত বাড়লেও এ হাটে লোকের আনাগোনা কমছে না বাজারে আসছে লাশের মিছিলরানা প্লাজা ধ্বসে নিহতদের লাশ আনা হচ্ছে স্কুলের মাঠেঅগণিত লাশ দেখে এই মাঠকে দেখে এখন স্কুল মাঠ বলে মনে হয় না, যেনো লাশের হাট বসেছে এখানেস্বজনেরা কাফনের কাপড়ে উল্টিয়ে খুঁজে ফিরছে প্রিয়জনের লাশ
 
অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠ বেশ বড়মাঠের এক পাশে দোতলা যে বিল্ডিং রয়েছে, তার নিচতলার বারান্দায় রাখা হয়েছে সারি সারি কাফনে মোড়া লাশদুর্ঘটনার পড় অনেক সময় গড়িয়ে গেছেকাফনের মুখ খুলে যারা লাশের সন্ধান করছেন এখন তাদের নাক চেপে দেখতে হচ্ছেএকের পর এক দেখছে, অনেকের মিলছে প্রিয় চেহারার নিথর প্রাণটিকেউ বোবা কান্নায়, কেউ আহাজারি করে ফিরছেন এখান থেকেপ্রিয়জনের লাশ খুঁজে পেয়ে জমে থাকা কান্না আর বাধ মানে নি তিনি ভাই হায়েম, ফারুম আর ফায়েজেরহাউ মাউ করে কেঁদে তিন ভাই তাদের মেঝো ভাই ফিরোজের লাশ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবছিলেনকান্নারত তারা নিজেদেরকেই প্রশ্ন করছেন বাবা-মায়ের কাছে কি জবাব দেবেন?

 

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় হায়েমের হাতেটাকা গুনে দেখার অবস্থা নেই এ লাশের হাটেনিজের প্রিয়জনের লাশ নিয়ে পিকআপে করে চলে যায় তিন ভাইএকটু পর পর অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে এনে রাখা হয় স্কুলের বারান্দায়মাঠে অপেক্ষা করা স্বজনরা আবার দৌড়ে যায়নাহ..এবারো দেখা মেলেনি গাইবান্ধার রফিকুল ইসলামের বোন রাশেদারহাসপাতালেও দেখা মেলেনি তার

 

২০ বছর বয়সী রাশেদার বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলায়, দামদুরপুর গ্রামেরফিকুল জানালেন, বছর চার আগে বিয়ে হয়েছিল একমাত্র ছোট বোনের২ বছরের বাচ্চা ইসমাইল এখন মাকে খুঁজছেস্বামী সাইফুল ইসলামও একই ফ্লোরে ছিলআহত হয়ে এক বাসাতেই রয়েছেএকই কারখানার শ্রমিক রাশেদার ননদও আহত হয়ে বাসায়

 

বুধবারেই ঢাকায় আসেন রাশেদার স্বজনেরাগত ৩০ ঘণ্টা ধরে খুঁজেও পাচ্ছে রাশেদাকে পাচ্ছে না জ্যাঠাতো ভাই মাজেদুর ইসলাম মাদেল, দেবর মো. বাবু, ফুফাতো ভাই মাহবুবমাঠের এক কোনে বসে আরো অ্যাম্বুলেন্স আসার অপেক্ষায় করছেন তারা
 
স্ত্রী নাসরিন আনোয়ার রানা প্লাজার ৪ তলায় কাজ করতেনআনোয়ার জাহিদ মাঠে ঘুরছেন একা একাহাতে বৌ এর ছবিআট বছর আগে বিয়ে হয়ছিল তাদেরসিয়াম ও রাইসা নামে দুই বাচ্চা রয়েছেনওগার মুক্তারপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি রাত সোয়া ১১টাআরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ এসেছেমাঠের হাজারো মানুষ আবারো ছুটেছে সেদিকেঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করা এসব স্বজনদের খাবারে আগ্রহ নেইমাঠের একপার্শ্বে খাবার বিলাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরাখাবার আর পানি দিচ্ছের তাদেররয়েছে মেডিকেল টিমও

 

স্কুলের ফটকে সন্ধান চাই বিজ্ঞাপন আঠা দিয়ে সাটানোর আর জায়গা নেইপাসপোর্ট সাইজ, থ্রি আর বা ফটোকপি দিয়ে প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে স্বজনরালাশের এ হাট কখন গুটাবে এখনও বলা যাচ্ছে নাএই হাটের যেনো শেষ নেইরাত রাড়ার সঙ্গে বাড়ছে হাটের স্থায়িত্বঅ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো লাশে নেই প্রিয়জনের মুখতাই আবারো ফিরে আসে কমলাকে হারানো স্বামী মোদাচ্ছেরচোখ ছল ছল করেদুঃখ তাকে এমনই কাবু করে ফেলেছে যে এখন বুক ফেটে কান্না করতেও পারছে না সে

 

(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৬ এপ্রিল /২০১৩.

 

শেয়ার করুন