অনেক ভালো খেলেছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু যেভাবে আউট হলেন, সেটি বড় আক্ষেপেরই জন্ম দিল। আক্ষেপের কথা বললে তো আরও বলা যায়—মুশফিকুর রহিম যদি পারতেন দিনটা শেষ করে আসতে!
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের সিমিং কন্ডিশন হঠাৎ করেই ব্যাটসম্যানদের অনুকূলে। সকাল থেকে রোদ। নতুন বল তো একটু এদিক-ওদিক করবেই। তবে উইকেটে প্রথম টেস্টের মতো বলের নাচানাচি নেই। দিন শেষে স্কোরবোর্ডের চেহারাটা হারারের সকালের আকাশের মতোই উজ্জ্বল হবে বলে আশা জাগছিল। ৬ উইকেটে ৩০০ রান, শেষ পর্যন্ত স্কোরটা খুব খারাপও নয়। কিন্তু ভালো ব্যাটিং করতে করতে হঠাৎই ধৈর্য হারানোর মাশুল দিতে দিতে দিন শেষে আউট হওয়া ব্যাটসম্যানের সংখ্যা যে ৬! দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনটা তাই শুধু টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৩০০ রান করে ফেলার স্বস্তি হয়েই থাকল না, সঙ্গে থাকল বড় একটা আক্ষেপও। ভালো, তবে আরও ভালো হতে পারত।
সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়েছেন বলে সাকিবের আউটটাই বেশি আলোচিত। নইলে তাড়াহুড়ো ব্যাটিংয়ের আরও অনেক খণ্ডচিত্রই আছে বাংলাদেশ দলের ইনিংসে। টেস্টটা পাঁচ দিনের, অথচ সবাই যেন এক দিনেই সব খেলে ফেলতে চাইলেন! উইকেট ব্যাটসম্যানদের, বোলিংও এমন আহামরি কিছু নয়, সারা দিনে স্বাগতিক ফিল্ডাররা ক্যাচ ফেললেন চারটা—এত কিছুর পরও প্রথম দিনে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলাটাকে দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হয়।
লাঞ্চের আগে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে দুটি, জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারদের হাত থেকে ক্যাচও পড়েছে দুটি। মেথের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে চতুর্থ স্লিপে ক্যাচ দিয়েও ক্রেমারের পিচ্ছিল হাতে পড়ে বেঁচে গেছেন ওপেনার জহুরুল ইসলাম। তামিম ইকবাল শুরুতেই একবার রানআউট থেকে বেঁচেছেন, পরে ব্যক্তিগত ২৪ রানে চিগুম্বুরার বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেও সেটা ধরতে পারেননি টেলর। ফিরে পাওয়া জীবনটাকে তামিম লাঞ্চের পরও টেনে নিয়ে যেতে পারলেও জহুরুল আউট হয়ে গেছেন ২৪ রান করেই। মেথকে হঠাৎই তুলে মারতে গিয়ে কাভারে ওয়ালারের সহজ ক্যাচ। এরপর শিঙ্গি মাসাকাদজার বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে আশরাফুলও ক্যাচ দিলেন গালিতে। লাঞ্চের আগের এই দুটি আউটই আসলে জিম্বাবুয়ের বোলারদের দেওয়া বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপহার।
হাতের চোট কাটিয়ে ফেরা তামিম ধৈর্য হারালেন ফিফটির একেবারে দ্বারপ্রান্তে গিয়ে। জার্ভিসের বলটাকে মিড অফে ঠেলেই অসাধ্য সাধনের দৌড় দিয়ে হয়ে গেলেন রানআউট। টেস্টে নিজের দুই হাজার রান পূর্ণ করা ইনিংসটা শেষ হলো অতৃপ্তি নিয়ে। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে ফিফটি পেলেন না ১ রানের জন্য। মাহমুদউল্লাহর জায়গায় দলে আসা মমিনুল চিগুম্বুরার গুড লেংথের বলে অদ্ভুত এক শট খেলে ক্যাচ দিয়েছেন এক্সট্রা কাভারে।
১২৫ রানে ৪ উইকেট পড়ার পরও এক দিনে তিন শ রানের ভিতটা গড়ে দিয়েছে পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিকের ১২৩ রানের জুটি। শিনবোনের চোট কাটিয়ে দলে ফেরা সাকিব প্রথম টেস্টে বলে-ব্যাটে কিছুই করতে পারেননি। কিন্তু কাল যেন ব্যাট হাতে সেই সাকিবকেই দেখা গেল, যাঁকে সবাই দেখতে চায়। প্রথম বলেই চিগুম্বুরাকে বাউন্ডারি মেরে শুরু। ৮১ রান করে কট বিহাইন্ডও হয়েছেন তাঁর বলেই। অথচ শেষ ঘণ্টায় এসে আরেকটু ধৈর্য ধরলেই টেস্টে নিজের ১২তম ফিফটিটাকে অনূদিত করতে পারতেন তৃতীয় সেঞ্চুরিতে। কিন্তু অধৈর্য সাকিব চিগুম্বুরাকে তেড়ে এসে যেভাবে মারতে গেলেন, সেটা কেবল আত্মহত্যার দিকেই এগিয়ে যাওয়া, সেঞ্চুরির দিকে নয়।
প্রথম দিনে হারানো ৬ উইকেট থেকে বাংলাদেশ সান্ত্বনা খুঁজতে পারে কেবল অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের আউট থেকেই। বলতে পারেন, আউট থেকে আবার সান্ত্বনা খোঁজে কীভাবে? তা-ও অধিনায়কের আউট থেকে এবং সেই অধিনায়কও কিনা আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভূমিকাতেই!
আসলে ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে একমাত্র মুশফিকের আউটটাতেই নেই ব্যাটসম্যানের কোনো ‘অবদান’। বরং জার্ভিসের এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ারের সাড়া দেখার পরও কয়েক সেকেন্ড উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকে মুশফিক যেন বোঝাতে চাইলেন, সিদ্ধান্তটা সন্দেহাতীত নয়। আউট হওয়ার আগে ৫টি চার আর দিনের একমাত্র ছক্কায় ৬০ রান করেছেন। সাকিবের আউটের পর নাসিরের সঙ্গে গড়েছেন ৩২ রানের জুটি।
জিয়ার সঙ্গে দিন শেষেও অপরাজিত আছেন নাসির ৩৭ রান করে। তবে এই ৩৭ রান এসেছে মাত্র ৩৯ বলে, যেখানে বাউন্ডারিতেই ২৮!
বোঝাই যাচ্ছে, টেস্টটাকে বাংলাদেশ এখনো ওয়ানডের মতো খেলতেই পছন্দ করে।
(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৬ এপ্রিল /২০১৩.