ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বেসরকারি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের একটি চিঠি ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাঁর ওই চিঠি রাজ্যের শাসক দলের সাংসদ, মন্ত্রী ও নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।চিঠিতে মোট ২২ জনের নামোল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁরা প্রচুর অর্থ নিয়ে গেছেন।
সুদীপ্ত সেন ও তাঁর দুই সঙ্গীকে গত বুধবার রাতেই কাশ্মীর থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুদীপ্ত, সারদা গোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও ঝাড়খন্ডের ব্যবস্থাপক অরবিন্দ সিং চৌহানকে বিধাননগর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সুদীপ্ত সেন ৬ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিবিআই) ১৮ পাতার ওই চিঠিটি লেখেন। চিঠি লেখার চার দিন পর তিনি কলকাতা থেকে পালিয়ে যান। এই চিঠিতে সুদীপ্ত সেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সাংবাদিক কুনাল ঘোষ এবং সংবাদ প্রতিদিন-এর সম্পাদক ও সাংসদ সঞ্জয় বসুর নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এই দুই সাংসদ তাঁদের কাছ থেকে মোটা অর্থ নিয়েছেন। তাঁরাই তাঁকে ১০টি সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেল কিনতে বাধ্য করেন। কুনাল প্রতি মাসে ১৫ লাখ রুপি করে বেতন নিতেন। ৩০ কোটি রুপি দিয়ে টিভি ‘চ্যানেল-১০’ কিনতে বাধ্য করেন। শুধু তা-ই নয়, সংবাদ প্রতিদিনকে মাসে ৬০ লাখ রুপি করে তাঁকে দিতে হতো। মাসে ৬০ লাখ রুপির বিনিময়ে বলিউড তারকা মিঠুন চক্রবর্তীকে সারদার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়।
অবশ্য মিঠুন চক্রবর্তী বুধবার অভিযোগ করেন, তিনি সারদার কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানী পাননি। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁর অর্থ দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর ওই বাকি টাকার চেয়ে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া এখন জরুরি।
চিঠিতে সুদীপ্ত সেন দাবি করেন, তাঁকে অশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সব দিক থেকে তাঁকে রক্ষা করবে।
পুলিশ চিঠিটি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। সেই চিঠির কথা ফাঁস হয়েছে বুধবার।কীভাবে সারদা গ্রুপের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে—চিঠিতে সুদীপ্ত সেন বিস্তারিত তা লিখেছেন।
সারদা গ্রুপের বিরুদ্ধে আমানত-কারীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কংগ্রেস সমর্থকেরা সারদার বিরুদ্ধে বিধাননগর আদালতের সামনে বিক্ষোভ করেছে। গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চে সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক দুটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি হয়। আদালত সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি ব্যাংকে লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
পুলিশ এ পর্যন্ত সারদা গোষ্ঠীর নগদ অর্থ ও সম্পত্তি মিলিয়ে ৯৫০ কোটি রুপির সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি ব্যাংক হিসাবে নগদ ৫০০ কোটি রুপি রয়েছে। আরও ২৮টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পাওয়া গেলেও অর্থের হিসাব এখনো পায়নি পুলিশ।(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৬ এপ্রিল /২০১৩.