ভবিষ্যদ্বাণী করা এক কঠিন কাজ। কিন্তু এই সত্য জেনে বা না জেনে অনেকেইভবিষ্যদ্বাণী করতে পিছপা হন না। তাই ব্যর্থতার ফল তাঁরা যথাসময়ে হাতে হাতেপান। সাধারণ মানুষের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হবে, সেটাই স্বাভাবিক বলে ধরেনেওয়া হয়। তবে বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানীও মাঝে মাঝে এমন সব ভবিষ্যদ্বাণীকরেছেন, পরে যা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এ দলে আছেন আইনস্টাইন থেকে হাল আমলেরবিল গেটসও।
শর্টওয়েভ, লংওয়েভ পেরিয়ে এখন এফএম রেডিও তরুণ প্রজন্মেরজনপ্রিয়তার শীর্ষে। এ রেডিওকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এফএম প্রজন্ম। আজ থেকে ১০০বছর আগে এ রকম ভাবতেও পারত না কেউ। ১৮৯৪ সালের কথা। সে সময় ইংল্যান্ডেররয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিখ্যাত গণিত ও পদার্থবিদ লর্ড কেলভিন।তাপ, বিদ্যুৎ, চুম্বকসহ পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবদান এখনোস্মরণীয়। তাঁর উদ্ভাবিত তাপমান যন্ত্র কেলভিন স্কেল এখনো বিশ্বজুড়ে ব্যবহারকরা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও তিনি রেডিওর কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাননি। অথচতাঁর কথার ঠিক উল্টো চিত্র এখন বিশ্বজুড়ে। বিশ্বে বর্তমানে এক বিলিয়নেরবেশি রেডিও সেট এবং ৩৩ হাজারের বেশি রেডিও স্টেশন আছে। কেলভিনের আরেকমন্তব্য, বাতাসের চেয়ে ভারী কোনো উড়ন্ত যন্ত্র উদ্ভাবন অসম্ভব। অথচ তিনিবেঁচে থাকতেই রাইট ব্রাদার্স প্রথম আকাশে উড়িয়েছিল বায়ুর চেয়ে অনেক ভারী একযন্ত্র। এখন তো মানুষের কাছে আকাশে ওড়া আরও সহজ। একইভাবে টেলিভিশন অচিরেইমানুষ ডাস্টবিনে ফেলে দেবে বলে ধারণা করেছিলেন সে সময়ের নামকরা অনেকবিজ্ঞানী।
রেডিও-টেলিভিশনের মতো আজ টেলিফোনও মানুষের দৈনন্দিনজীবনের অংশ। অথচ বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে টেলিফোনকে অনেকেই ভালো চোখেদেখেননি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সে সময়ের পোস্ট অফিসের প্রধান প্রকৌশলীস্যার উইলিয়াম প্রিন্স মন্তব্য করেছিলেন, আমেরিকার টেলিফোনের প্রয়োজন থাকতেপারে, কিন্তু তাঁদের নেই। কারণ, তাঁদের যথেষ্ট বার্তাবাহক আছে। এমনকিবিশ্বখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনও টেলিফোনের ভবিষ্যৎ অন্ধকারদেখেছিলেন।
আরেক বিখ্যাত মার্কিন উদ্ভাবক টমাস আলভা এডিসনঅল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি সম্পর্কে বলেছিলেন, কেউ এ ধরনের বিদ্যুৎব্যবহার করবে না। তাই এটা নিয়ে কথা বলাই বোকামি। সারা বিশ্বে বাসাবাড়ি, শিল্প কারখানায় তাঁর উদ্ভাবিত ডাইরেক্ট কারেন্ট বা ডিসির চেয়ে এসিবিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। আইরিশ বিজ্ঞানী ড. ডায়োনিসিস লার্ডার দৃঢ় বিশ্বাসছিল, রেলগাড়ি বাহন হিসেবে খুব বেশি গতিসম্পন্ন হবে না। তাঁর ধারণা, রেলগাড়ি বেশি গতিসম্পন্ন হলে এর যাত্রীরা শ্বাস বন্ধ হয়েই মারা যাবে। অথচতাঁর কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্যই হয়তো বর্তমানে রেলগাড়ি ঘণ্টায় ৫০০কিলোমিটারের গতিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে, ১৮৯৯ সালে আমেরিকার পেটেন্টঅফিসের পরিচালক সে সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন, মানুষের পক্ষে যা কিছু উদ্ভাবন করা সম্ভব, তার সবই ইতিমধ্যে উদ্ভাবিতহয়েছে। এ ক্ষেত্রে মন্তব্য একেবারেই নিষ্প্রয়োজন।
(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৬ এপ্রিল /২০১৩.