২০১০ সালের জুলাইয়ে কেপটাউনে যখন উল্লাসে মাতোয়ারা মুলাররা, লিওনেল মেসি তখন কী করছিলেন? সেই দৃশ্যটাই গত পরশু ফিরে এল মিউনিখে। হাঁটুতে ভর দিয়ে উবু হয়ে আছেন লিওনেল মেসি। সেই ‘৪-০’-ই। সেবার মেসির আর্জেন্টিনাকে জার্মানি ছিটকে দিয়েছিল বিশ্বকাপ থেকে। এবার মুলারের বায়ার্ন মিউনিখ বিদায়ের দুয়ার দেখিয়ে দিল বার্সেলোনাকে। দুটি গোল করে এবং একটি করিয়ে নায়ক সেই মুলার।
ফিরতি লেগের ৯০ মিনিট এখনো আছে। এসি মিলানের বিপক্ষে বার্সার দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিও টাটকা। কিন্তু ‘অলৌকিক’ ব্যাপারটা পাইকারি বাজারে হররোজ মেলে না। সেমিফাইনাল থেকে কার্যত বিদায়ই নিয়ে নিল বার্সা। যে পেপ গার্দিওলার হাত ধরে নবযুগের এক যাত্রা শুরু হয়েছিল, চার বছর পর গার্দিওলার ভবিষ্যৎ দলের হাতেই যেন সমাপ্তি ঘটল সেই বৃত্তের। বার্সার দায়িত্ব নিয়ে তাঁর প্রথম মৌসুমে গার্দিওলা চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে বায়ার্নকে নিজেদের মাঠেই ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেটির পুনরাবৃত্তিই কেবল পারে বার্সাকে বাঁচাতে। সম্ভব? জাভি-পিকেরাই যে তা বিশ্বাস করেন না!
ম্যাচটা দেখে থাকলে একটা সংশয় হয়তো আপনার মনেও খেলা করেছে। আসলে কতজন নিয়ে খেলেছে বায়ার্ন মিউনিখ? মাঠে তো শুধুই লাল জার্সি! যেন ১১ জনের বদলে বায়ার্নের হয়ে খেলছে ১৫ জন! বিদায়ী কোচ ইয়ুপ হেইঙ্কেসের সার্থকতা এখানেই।তিনি জানতেন, বার্সাকে বধ করার সরল মন্ত্র দুটি—গতি এবং শূন্যে খেলা।বায়ার্ন এতটাই গতিশীল ছিল যে রক্ষণ-মাঝমাঠ কি আক্রমণ, সব খানে তাদেরই খেলোয়াড়। বার্সার আসল যে শক্তি তাদের মাঝমাঠ, বাস্তিল দুর্গের মতো সেটার পতন ঘটালেন বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার। মেসিকে বলতে গেলে অদৃশ্য করে রাখলেন দান্তে। আর বার্সার রক্ষণ? পিকেকে মনে হয়েছে রীতিমতো শিক্ষানবিশ! গোলরক্ষক ভিক্টর ভালদেসও বুঝিয়ে দিলেন, তিনি চলে যাচ্ছেন বলে বার্সেলোনার হাহাকার করার কিছু নেই।
শূন্যে বার্সার চিরায়ত দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে হলে চাই সেট পিস।প্রথমার্ধেই বায়ার্ন পেল আটটি কর্নার। এর ৬ নম্বরটা থেকেই গোল। ২৫ মিনিটের এই গোলই প্রথমার্ধকে বার্সার নাগালের মধ্যেই রাখল। দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটের মাথায় আবার কর্নার থেকে গোল। মারিও গোমেজ হয়তো অফসাইডে ছিলেন। সেটা ধরতে না পারা লাইন্সম্যানের যতটা ব্যর্থতা, বার্সা রক্ষণ এবং গোলরক্ষক ভালদেস যেভাবে গোলটা হতে দিলেন; সেটা আরও বড় ব্যর্থতা।
৭৩ মিনিটে আরিয়েন রোবেনের গোলটাও বিতর্কিত। রোবেনের পিছু ধাওয়া করা জর্ডি আলবাকে যেভাবে মুলার শরীর দিয়ে আটকে ফেলে দিয়েছেন, সেটা ফুটবলীয় নীতির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু সেই মুলারই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেও থেকে গিয়ে ৮২ মিনিটে কফিনে ঠুকেছেন শেষ পেরেক। ম্যাচটা যখন ৪-০ হয়ে যায়, তখন ‘বিতর্কিত গোল’ শব্দবন্ধটাকেই বড্ড খেলো লাগে। তা ছাড়া ভুলের দাক্ষিণ্য তো শুধু বায়ার্নই পায়নি, বক্সের মধ্যে পিকের হ্যান্ডবল চোখ এড়িয়ে গেছে রেফারির।
বায়ার্নের জন্য স্বপ্নের এক রাতে বার্সেলোনা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর একসময় শেষ বাঁশি বাজল। রোবেন-রিবেরিদের বাঁধভাঙা উল্লাসটাই বলে দিল, এ উল্লাস ম্যাচ জয়ের নয়, টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে পৌঁছানোর! এএফপি, রয়টার্স।
(২৫ এপ্রিল/২০১৩) নিউজরুম.