খেলা শেষ। বেজে গেছে আম্পায়ারের শেষ বাঁশি। মহিলা কাবাডির সোনার লড়াইয়ে ১৯-১৬ পয়েন্টে জিতে উল্লাসে মেতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিজেএমসি। তখনই শুরু হয়ে গেল লঙ্কাকাণ্ড। গ্যালারি ও কোর্টের পাশ থেকে আনসার সদস্যরা চড়াও হলেন ম্যাচ পরিচালনাকারী আম্পায়ার আলী আজগর ও রফিকুল ইসলামের ওপর। চেয়ার তুলে যথেচ্ছ মার শুরু হলো, সঙ্গে চলল কিল-ঘুষি ও লাথি। দুই আম্পায়ারই আহত হলেন। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম একটু বেশি। কোর্ট থেকে পালিয়ে কর্মকর্তাদের পাশে গিয়েও তিনি রক্ষা পাননি। মাথা ফেটে গেছে, কাবাডি কোর্ট থেকে যেতে হয়েছে হাসপাতালে।
আনসারের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আম্পায়ার পক্ষপাত করে জিতিয়ে দিয়েছেন বিজেএমসিকে। এর জেরেই এমন ‘সন্ত্রাসী’ আক্রমণ আনসারের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয় কাবাডি স্টেডিয়ামে।র্যাব আসার পর আম্পায়ারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে পদক না নিয়েই স্টেডিয়াম ছেড়েছেন আনসারের খেলোয়াড়, সদস্য ও কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ গেমসের ইতিহাসে কলঙ্কের একটা দিনই গেল কাল। পল্টনের কাবাডি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব (বিওএ) সৈয়দ শাহেদ রেজা ও অন্য কর্মকর্তাদের সামনেই এমন একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন আনসার সদস্যরা। শুধু আম্পায়াররাই নন, তাঁদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরাও। আনসারের খেলোয়াড় শাহনাজ পারভীন হাত কামড়ে দিয়েছেন বিজেএমসির কাজী শাহীনারার। আনসার সদস্যদের চেয়ারের আঘাতে আহত হয়েছেন আরেক খেলোয়াড় ফাতেমা আক্তার (শিলা)। মারামারি ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন আনসারের কোচ আবদুল জলিলও। আনসার সদস্যরা এমনই উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন যে, ভিড়ের মধ্যে চেয়ারের আঘাতে রক্ত ঝরেছে দুই আনসার সদস্য কামাল হোসেন ও তোফায়েল আহমেদেরও।
এই ঘটনা দেখে স্তম্ভিত সৈয়দ শাহেদ রেজা। খুব দ্রুতই দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দিলেন তিনি, ‘ঘটনাটা দুঃখজনক। তবে এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। আমরা ফেডারেশনের কাছে এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছি।আগামী তিন দিনের মধ্যে তা পাওয়ার পর আমরা দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
বিজেএমসির পরিচালক আরিফ খান জয়ও দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি চাইলেন, ‘খেলার মাঠে এমন ঘটনা কারও কাম্য নয়। আমরা কমপক্ষে ১০ বছর শাস্তি দাবি করছি আনসারের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাস্তি না দিলে আমরা গেমস থেকে বিজেএমসি দল প্রত্যাহার করে নেব।’
যে আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কাণ্ড ঘটাল আনসার, সেটির কোনো ভিত্তি দেখছেন না ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ‘হেরে গেলে এমন অভিযোগ শোনাই যায়। তবে আম্পায়ারিং মোটেই পক্ষপাতপূর্ণ ছিল না।’
(২৪ এপ্রিল/২০১৩) নিউজরুম.