চলেই এল গ্রীষ্ম। আপনিও তৈরি হয়ে যান—লড়তে। এ লড়াই নিজেকে সুন্দর রাখার লড়াই। কার বিরুদ্ধে? গ্রীষ্মের প্রখর রোদ, ধুলা আর হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে।ফলে কী হবে? সুন্দর থাকবেন আপনি এই খর গ্রীষ্মেও। আর সকালের ঝলমলে রোদে ঘরের বাইরে পা দিয়ে বলে উঠবেন, আহা! কী সুন্দর দিন।
গ্রীষ্মের কড়া রোদে হাত, পা ও মুখের ত্বক এমনকি চুলেরও ক্ষতি হয়। মেকআপ নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানে বা অফিসে যাবেন? সেই মেকআপ যে সব সময় আপনাকে ‘ব্যাকআপ’ দেবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। এই আবহাওয়ায় সব সময় মেকআপ ঠিক রাখা যায় না।মেকআপের ওপর ভরসা না করে ত্বক আর চুলের নিয়মিত যত্ন নেওয়াটাই ভালো।কীভাবে, তা-ই জানালেন কিউবেলার প্রধান রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা আরমান এবং রেড বিউটি স্যালনের প্রধান রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।
মুখ
শীতে যেমন বিশেষ প্রসাধনীর প্রয়োজন, গ্রীষ্মেও তেমনি আবহাওয়া—উপযোগী প্রসাধনী ব্যবহার করা চাই। ন্যূনতম এসপিএফ ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম এবং ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। একই সঙ্গে রাত ও দিনের আলাদা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। দিনের ময়েশ্চারাইজার একটু তরল হবে কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগের ময়শ্চারাইজার ভারী হওয়া চাই। ত্বকে রোদে পোড়াভাব দেখা দিলেই বাড়ি ফিরে শসা ও টমেটোর রস ২৫ মিনিট মেখে ধুয়ে ফেলুন। টমেটো, শসা ও গাজরের কুচিও ব্যবহার করতে পারেন। মধু ও পেস্তার পেস্ট ত্বকের শুষ্কতা কমাবে। গোসলে সাবানের বদলে শাওয়ার জেল ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, প্রতিদিনের এ যত্নে আপনার ত্বক শুধু গ্রীষ্মে নয়, সারা বছরই ভালো থাকবে।
হাত
প্রতিদিন না পারলেও অন্তত সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ঘরোয়া ম্যানিকিওর করে নিন।প্রথমে নেইল কাটার বা ফাইলার দিয়ে নখের আকার ঠিক করে নিন। হালকা গরম পানিতে বেবি শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। এতে হাত ডুবিয়ে রাখুন ৫ থেকে ১০ মিনিট।তারপর ব্রাশ দিয়ে প্রতিটি অংশ ঘষে নিন। নখে হলুদ ছোপ পড়লে লেবু ঘষে নিন।তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে আলতো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে হালকা মালিশ করে নিন। রোদে পোড়াভাব কমাতে পুরো হাতে কাঁচা হলুদ ও চন্দনের প্যাক লাগাতে পারেন।
পা
গরমে পা খোলা চটি পরাটাই আরামদায়ক। তবে তাতে ধুলা, কাদা, বৃষ্টির পানি, রোদ লেগে ত্বক তো পোড়েই, ছত্রাক সংক্রমণেরও ভয় থাকে। প্রতিদিন ঘরে ফিরে শ্যাম্পু দিয়ে পা পরিষ্কার করা উচিত। ছুটির দিনে ম্যানিকিওরের নিয়মেই পেডিকিওর করিয়ে নিন। শুধু পা ১০ মিনিট পানিতে ডুবিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে ঘষার আগে ঝামা বা পিউমিস স্টোন দিয়ে ভালোমতো গোড়ালি ঘষে নেবেন।
সবশেষে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে মোজা পরে থাকবেন ১০ মিনিট। এর ফলে পায়ের ত্বক ভালোমতো ময়েশ্চারাইজার শুষে নিতে পারবে। যাঁদের পায়ে পানি লাগালে সমস্যা হয়, তাঁরা গোসলের আগে জলপাই তেল মেখে নেবেন।
চুল
খাবারে ভেজাল এবং অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত পানির দৌরাত্ম্যে আজকাল চুলপড়া বাড়ছে। এই গ্রীষ্মে যোগ হবে ঘাম। তাই সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বাদাম কিংবা নারকেল তেল দিয়ে মালিশ এবং প্রয়োজন হলে প্রতিদিন ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়া উচিত।
সপ্তাহে দুই দিন মাথার ত্বকে পাকা কলা বা পেঁপে ব্যবহার করতে পারেন। যাঁদের চুল তৈলাক্ত, তাঁরা ব্যবহার করবেন টকদই এবং হেনার প্যাক। বেশি শুষ্ক হলে মেয়োনেজ দিতে পারেন। ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল তেল মিশিয়ে দিতে পারেন।
প্রতিদিনের সাজ
গরমে প্রতিদিনের মেকআপ হওয়া চাই ছিমছাম এবং স্বস্তিকর। প্রথমেই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।তারপর মাখবেন ন্যূনতম এসপিএফ ১৫ যুক্ত সানস্ক্রিন ক্রিম। তার ওপর আলতো করে লুজ পাউডার বা ফেসপাউডার মিশিয়ে নেবেন। চোখে থাকবে পানিরোধী মাশকারা।লাইনার ও কাজলও হওয়া চাই পানিরোধী। ঠোঁটে লাইনার বা লিপস্টিক যা-ই দেন তা ম্যাট হবে। ঠোঁট শুষ্ক হলে রাতে ভ্যাসলিন, লিপবাম বা নারকেল তেল মেখে ঘুমাবেন। সারা দিন ঠোঁট নরম থাকবে। চুল যতটা সম্ভব বেঁধে রাখবেন। পনিটেল, খেঁজুর বেণি, ফ্রেঞ্চ বেণি, টুইস্ট খোঁপা এ গরমে সবচেয়ে মানানসই হবে।
পার্টিতে সাজ
দুপুরে বা সন্ধ্যায়, গরমের অনুষ্ঠানে সাজতে বসে আরামকে প্রাধান্য দিতে হবে আগে।প্রথমে ১৫ মিনিট ময়েশ্চারাইজার মেখে ত্বকটা নরম করে নেবেন। তারপর ভালোমতো পরিষ্কার করে নিন। একটু ভারী মেকআপের জন্য এ সময়ের ফাউন্ডেশন হবে স্টিক ফাউন্ডেশন। শুষ্ক ত্বকের জন্য মুজ ফাউন্ডেশন। ফোঁটায় ফোঁটায় পুরো মুখে লাগিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে ত্বকের সঙ্গে। তারপর লুজ পাউডার মেখে নেবেন। ঘাম কম হবে তাতে। চোখের সাজের জন্য বিভিন্ন রং বেছে নিতে পারেন। তবে শেডগুলো যত ভালো ব্লেন্ড করতে পারবেন, তত ভালো দেখাবে। সবুজ, কপার, বাদামি শেড খুব চলছে আজকাল। পানিরোধী মাশকারা, লাইনার ও কাজল তো থাকছেই। ঠোঁটে উজ্জ্বল লিপস্টিক এখনকার ট্রেন্ড। লাল, ম্যাজেন্টা, কমলা রং বেছে নিতেই পারেন। তবে সহজ সূত্রটা মনে রাখবেন, চোখ ও ঠোঁটের ঔজ্জ্বল্যের সম্পর্ক সবসময় বিপরীত।অর্থাৎ একটি ভারী হলে অন্যটি হালকা হবে। চুলে আজকাল সোজাসাপ্টাভাব চলে গিয়ে এলোমেলো লুক চলে এসেছে ট্রেন্ড হয়ে। তাই কোঁকড়া করে ছেড়ে রাখলেও মন্দ দেখাবে না।
(রুপশী বাংলা নিউজ) ২৩ এপ্রিল /২০১৩.