মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর হামলার নিন্দা জানাতে অস্বীকার করার ঘটনায় সারা বিশ্বের মানবাধিকারকর্মীদের মাঝে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তাঁর বাকসংযমী মনোভাব ভোটারদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
মধ্য মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ৪৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রায় এক মাস পর মুসলমানদের প্রতি তিনি সহানুভূতি জানান।কিন্তু মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে কোনো নিন্দা জানাননি।
১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সু চি। বছরের পর বছর গৃহবন্দী থেকে নানা দুঃখকষ্ট সহ্য করেছেন। দীর্ঘদিন দেশটির সাবেক সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০১২ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলমান ও জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে দুই দফায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সহিংসতায় প্রায় ১৮০ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় তিনি পরোক্ষভাবে ‘আইনের শাসন’-এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে জাপান সফরকালে মুসলমানদের সম্পর্কে সু চি বলেন, ‘ভাবলে কষ্ট পাবেন, তারা (মুসলমান) আমাদের দেশকে মনেপ্রাণে ধারণ করে না।’ মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাঁর এ ধরনের মন্তব্যে খুশি হতে পারেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেন, ‘আমি খুশি যে, সহিংসতার শিকার মানুষগুলোর দুরবস্থার বিষয়টি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি স্বীকার করেছেন। কিন্তু শুধু দুঃখ প্রকাশ করেই তিনি দায় এড়াতে পারেন না।তাঁর আরও অনেক কিছু করার ছিল।’
ফিল রবার্টসন বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের ঘাড়ে। কিন্তু সু চি তো একজন সাধারণ বিরোধীদলীয় নেতা নন। দিনের পর দিন নিজের ভেতরে যে উন্নত নৈতিকতাবোধ গড়ে তুলেছেন, সেগুলোর প্রয়োগ ঘটানোর প্রয়োজন ছিল।’
জাতিসংঘের বিবেচনায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত প্রায় আট লাখ মানুষ রাখাইন রাজ্যে বাস করে। গত বছরের ওই সহিংসতায় উদ্বাস্তু হয়ে পড়া সেখানকার কয়েক হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়হীন। এত বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বকারী দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর ডেভেলপমেন্টের আবু তাহাই বলেন, স্বাধীনতার নায়ক অং সানের কন্যা হিসেবে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার ব্যাপারে সু চির একটা দায়িত্ববোধ আছে।
অস্টেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নিকোলাস ফেরি বলেন, ‘২০১৫ সালে মিয়ানমারে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জিততে চান সু চি। এ অবস্থায় তিনি রোহিঙ্গা অন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রাখছেন বলে কোনোভাবে প্রতীয়মান হলে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এমনকি এই সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা তাঁর সমর্থকেরা চটতে পারেন।
রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ব্যাংকক-ভিত্তিক দ্য আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিউয়া বলেন, নেতৃত্বের বড় পরীক্ষায় সু চি ব্যর্থ হয়েছেন। লিউয়া বলেন, তিনি আইনের শাসন নিয়ে অনেক কথা বলেন, কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। এএফপি।
২২ এপ্রিল /২০১৩.