মাঠে খেলা হচ্ছে আর তিনি বসে আছেন বাইরে। মাঠে ঢুকলেও ঢুকছেন সতীর্থদের জন্য পানি আর তোয়ালে নিয়ে। এমন অভিজ্ঞতা এর আগে খুব বেশি না থাকলেও আঙুলের চোট জিম্বাবুয়েতে এবার সেই অভিজ্ঞতাই দিচ্ছে তামিম ইকবালকে। হারারেতে তারেক মাহমুদকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার বললেন মাঠের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতার কথা
দর্শক হয়ে খেলা দেখতে কেমন লাগছে?l
তামিম ইকবাল: এখানে তো আমার কিছু করার নেই। ফিট থাকলে অবশ্যই খেলতাম। এই উইকেটে আমি হয়তো খারাপ ব্যাটিং করতাম না। তবে এখনো আশা করছি দ্বিতীয় টেস্টে খেলব। একটা টেস্ট খেলিনি বলে আফসোস করছি না। না, খেলা নিয়ে আমি চিন্তিত নই, তবে আমার হাতটা নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত।
সর্বশেষ আলট্রাসনোগ্রামে তো চিড় ধরা পড়ল হাড়ে। দ্বিতীয় টেস্টের আগে সুস্থ হওয়া সম্ভব?l
তামিম: এখনো আমার চার সপ্তাহ শেষ হয়নি। আগামী মঙ্গলবার শেষ হবে। সর্বশেষ স্ক্যানে দেখা গেছে জায়গাটা এখনো পুরোপুরি সারেনি। না সারার আগেই কিছু করা মানে ঝুঁকি থেকে যাওয়া। আমাদের আশা ছিল আরেকটু তাড়াতাড়ি সারবে। সেটা হয়নি।
চোট পাওয়ার পর থেকেই ব্যাটিং থেকে দূরে আছেন। এখন পুরোপুরি সুস্থ হলেও তোl প্রায় প্র্যাকটিস ছাড়াই খেলতে হবে। এটাকে সমস্যা মনে করছেন না?
তামিম: টুকটাক নক শুরু করেছি। তাতেও আগামী চার-পাঁচ দিনে হয়তো মানসিকভাবে এক শ ভাগ তৈরি হতে পারব না। তবে এখনকার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় যাওয়া সম্ভব। আর সেরে গেলেই যে খেলতে পারব, তাও না। দুই-তিনটা ব্যাটিং সেশনের পর বুঝতে পারব ব্যথাটা সহ্য করতে পারব কি পারব না। অতটুকু ব্যথা নিয়ে আমি খেলতে পারব কি পারব না, সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
খেলা চলাকালে মাঠের বাইরে বসে থাকা, পানি নিয়ে যাওয়া—এই অভিজ্ঞতা তো খুবl বেশি নেই আপনার। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে নিজের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তামিম: (হাসি) দলে আসার পর এটা সম্ভবত দ্বিতীয় টেস্ট, যেটা আমি খেলছি না।এর আগে শ্রীলঙ্কায় একটা টেস্ট খেলিনি। নতুন অভিজ্ঞতা তো অবশ্যই। তবে এই অভিজ্ঞতার মধ্যে বেশি দিন না থাকাই ভালো। যদিও না খেললেও আমি সবার সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। কোচ যে বার্তা দেন সেটা মাঠে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। একজন দ্বাদশ খেলোয়াড়ের যা যা করা উচিত আমি সেভাবেই কাজ করছি। টিমকে সাহায্য করা, পানি খাওয়ানো সবই করছি।
হারারেতেl হোটেল থেকে মাঠ বেশি দূরে নয় বলে একাদশের বাইরে থাকা খেলোয়াড়েরা মাঠে আসা-যাওয়া করছেন দৌড়ে। এটা যদিও ফিটনেস ধরে রাখারই অংশ, কিন্তু আপনি তো বোধহয় এসবে অভ্যস্ত নন…
তামিম: আমরা সকালে মাঠে যাই দৌড়ে, আসিও দৌড়ে। ব্যাটিং যেহেতু করতে পারছি না, ফিটনেসের ওপর একটু কাজ করতে পারলে আমার জন্যই ভালো হবে। আশা করি দলে যখন ফিরব তখন আরও বেশি ফিট থাকব, যেমনটা আগেও ছিলাম।
সবাই খেলছে আর আপনি বসে আছেন। দৌড়াদৌড়ি যা করার মাঠের বাইরে করছেন। বিরক্ত লাগে না?l
তামিম: অবশ্যই…বিরক্ত তো লাগেই। সত্যি বলতে কি, বাংলায় যেটাকে বলে চুলকাচ্ছে। ব্যাট ধরার জন্য আমার হাত চুলকাচ্ছে…কখন ব্যাট ধরব! কিন্তু এমন একটা অবস্থায় আছি যে কিছুই করতে পারছি না।
আগে কখনো ব্যাটিং না করে এতদিন ছিলেন?l
তামিম: অপারেশনের পর ছিলাম। কিন্তু তখন খেলাও ছিল না। খেলা চলাকালীন এ রকম কখনো ব্যাটিং না করে ছিলাম না।
জিম্বাবুয়েতে আগের সফরটাও ভালো কাটেনি আপনার। অনেক বিতর্ক-সমালোচনারl মধ্যে পড়েছিলেন। যার জেরে আপনাকে আর সাকিব আল হাসানকে নেতৃত্ব থেকেই সরিয়ে দেওয়া হলো। এবার এখানে আসার পর সেই স্মৃতিও কি হানা দিচ্ছে?
তামিম: এটা তো অবশ্যই মাথায় থাকে। একটা বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম আমরা।তবে প্রত্যেক সফরেই একজন ক্রিকেটারের বিশেষ একটা লক্ষ্য থাকে। খেলতে পারলে এবার আমারও লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশ দলের জন্য ইতিবাচক কিছু করে আগের বাজে স্মৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা।
এবার কি সাকিবের সঙ্গেl কথা হয়েছে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে?
তামিম: যদি আমাদের কোনো দোষ থাকত বা যদি কোনো ভুল করে থাকতাম তাহলে নিশ্চয়ই আলোচনা করতাম। আমরা জানি যে আমাদের কোনো ভুল ছিল না, আমাদের কোনো দোষও ছিল না। এটা নিয়ে তাই আমাদের মধ্যে কোনো কথাও হয় না। বলতে পারেন ব্যাপারটাকে আমরা গুরুত্বই দিই না।
ব্রায়ান ভিটরির সঙ্গে কথা হয়েছে এবার?l
তামিম: দেখা হলে হায়-হ্যালো হয়। তা ছাড়া আর কোনো কথা হয় না। ওর সঙ্গে ওরকম বাড়তি খাতিরও নেই আবার খারাপ কিছু্ও নেই। যত দূর জানি সে খুব ভালো মানুষ।
শুনলাম ভিটরি নাকি ডিনার করতে চান আপনার সঙ্গে। ডাকলে যাবেন?l
তামিম: অবশ্যই যাব। এতবার ও আমাকে আউট করেছে, একবার তো তার আমাকে ডিনারে ডাকাই উচিত…(হাসি)।
(২১ এপ্রিল/২০১৩) নিউজরুম।