ভুলটা অবশেষে বুঝতে পারলেন, কিন্তু বুঝলেন দেরিতে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বললেন। পরে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও মুশফিকুর রহিম স্বীকার করে নিলেন, তিন পেসার নেওয়াই বোধ হয় ভালো ছিল। সঙ্গে হতাশা ঝরিয়েছেন ফিল্ডিং নিয়েও, ‘একটা ভুল সম্ভবত করেছি…আমরা তিনটা পেসার খেলাইনি। একই সঙ্গে ক্যাচগুলোও যদি নিতে পারতাম, তাহলে ২৫০-এর মধ্যে ওদের অলআউট করা যেত।’
পরাজয়ের ময়নাতদন্ত মানেই অনেকগুলো ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’র সমারোহ। এটা যদি ও রকম হতো, ওটা এ রকম না হয়ে এ রকম। ফেলে আসা ভুলের জন্য আক্ষেপ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’ ভবিষ্যতের জন্য সংশোধন হওয়ারও পথ দেখায়।হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে কাল পরাজয়ক্লিষ্ট বাংলাদেশের অধিনায়কও আশার ভেলা ভাসালেন, ‘হাতে কিছু সময় আছে। ভুল থেকে শিখে আশা করি পরের টেস্টে আমরা ফিরে আসব। এটা ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই।’
ভুলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর বোধ হয় ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। মুশফিকও বললেন, ‘যেভাবে আউট হয়েছি আর গত চার দিন আমার যেভাবে খেলেছি, সেটা খুবই হতাশাজনক। বিশেষ করে ব্যাটিংটা হয়েছে খুবই খারাপ। আমার মনে হয় কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো টেকনিক আমাদের জানা ছিল। কিন্তু মাঠে গিয়ে কিছু বাজেট আউট হয়েছি আমরা, বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড়েরা।’
তবে শুধু ব্যাটিং বা ফিল্ডিং নয়, দ্বিতীয় টেস্টের আগে মুশফিক উন্নতির প্রয়োজন দেখছেন বোলিংয়েও, ‘অনেক জায়গায়ই উন্নতির দরকার আছে। বিশেষ করে ব্যাটিং এবং ক্যাচিংয়েও। প্রথম ইনিংসে ওটাই আমাদের ডুবিয়েছে। তা ছাড়া পুরো টেস্টে বোলিংও খুব একটা ভালো ছিল না। কিছু সময়ে হয়তো খুব ভালো বল হয়েছে, পুরো টেস্টে নয়। আমার মনে হয়, কোনো বিভাগেই সামর্থ্যের ২০ শতাংশও খেলতে পারিনি আমরা।’ দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নেওয়া পেসার রবিউল ইসলামকে অবশ্য প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে ভুললেন না অধিনায়ক, ‘প্রথম ইনিংসে ২৫০ রান পিছিয়ে থাকলে ফেরাটা কঠিন হয়। তার পরও শিপলু (রবিউল) অনেক ভালো বল করেছে। ও আমাদের আশা দিয়েছিল। ৩৫০-৪০০ রান টার্গেট হলে ম্যাচ ক্লোজ না হলেও কাছে যেতে পারতাম।’
হারারের উইকেটেও দলে তিন পেসার না নেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু থেকেই। মুশফিক সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কন্ডিশন না বোঝার কথাই বললেন আগে। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘এই কন্ডিশনে আসলে দল নির্বাচন করাটাই কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য।তিনটা পেসার নিলে দেখা যায় উইকেট ফ্ল্যাট। ব্যাটিংয়ের লেজটাও লম্বা হয়ে যায়। তা ছাড়া সাকিব বোলিং করতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে পরের ম্যাচে উইকেট এ রকম থাকলে তিনটা পেসার অবশ্যই নেব।’
সে ক্ষেত্রে মুশফিকের দলের জন্য অপেক্ষা করছে সম্ভবত অনিশ্চিত পরিস্থিতি।দল সূত্রের খবর, কাল অনুশীলনে বল করতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছেন প্রথম টেস্টে না খেলা পেসার শাহাদাত। কাঁধে চোট আছে পেসার রুবেল হোসেনেরও। ভাগ্য সহায় না হলে এই দুই পেসারই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারেন দ্বিতীয় টেস্টে। সে ক্ষেত্রে তিন পেসারের কোটা পূরণ করতে হলে ঢাকা থেকে আরেকজন পেসার উড়িয়ে আনলেও আনতে হতে পারে।
অবশ্য তিন পেসার নিলেও প্রথম টেস্টে ভাগ্য কতটা বদলাত কে জানে। মূল পার্থক্য তো গড়ে দিয়েছেন ব্রেন্ডন টেলরই! মুশফিকও মানলেন, ‘আমাদের বোলিং সে পছন্দই করে। আর এ রকম কন্ডিশনে যে ও বিপজ্জনক এটা বারবারই প্রমাণ করেছে।’
প্রতিপক্ষ অধিনায়কের প্রশংসা পেয়ে সেটা আবার অন্যভাবে ফিরিয়েও দিয়েছেন ব্রেন্ডন টেলর, ‘আমার মনে হয় না খুব বেশি নেতিবাচক কথা বলার আছে বাংলাদেশ নিয়ে। তারা ভালো লড়াই করে। এই টেস্টে যদি কোনো কিছু নিয়ে তাদের সত্যিই ভুগতে হয়ে থাকে সেটা আমাদের কন্ডিশন। আমরা যখন আবার বাংলাদেশে খেলতে যাব, আমাদেরও তখন সংগ্রাম করতে হবে।’
ব্যাটিংয়ের মতো প্রতিপক্ষকে সান্ত্বনাও দিতে জানেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক!
(২১ এপ্রিল/২০১৩)নিউজরুম।