প্রথম টেস্টের খেলোয়াড় তালিকা দেখে অবাক হয়েছিলেন নিল ম্যানথ্রপ। কৌতূহল নিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘এমন উইকেটেও তোমরা তাহলে তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে খেলছ!’ তাঁর বিস্ময় আরও বেড়ে গেল, যখন জানলেন, তিনজনের মধ্যে সাকিব আল হাসান খেলছেন শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে। সাকিব খেলবেন অথচ বল করবেন না, এটা মানতে যেন কষ্টই হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকান কলামিস্ট-সাংবাদিক ম্যানথ্রপের।
কাল সাকিবের বোলিংয়ের সময় ভদ্রলোককে প্রেসবক্সে খুঁজে পাওয়া গেল না। পেলে একটা প্রতিক্রিয়া নিয়ে নেওয়া যেত।কিংবা উল্টো এই প্রতিবেদককেই হয়তো ব্যাখ্যা করে বলতে হতো সাকিবের হঠাৎ বল হাতে নেওয়ার কারণ।
শিন বোনের চোটে পড়ে গত নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনা টেস্ট খেলে ঢাকায় ফিরে আসেন সাকিব। দলে ছিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে এবং পরে শ্রীলঙ্কা সফরেও।চোটমুক্ত হতে কিছুদিন কাটালেন বিশ্রামে, পরে পুনর্বাসন-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও গেলেন। কিন্তু বিসিবির ফিজিও-চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া সময়ে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে তাঁকে।
সিডনির নর্থ শোর প্রাইভেট হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মার্টিন সুলিভানের ছুরির নিচ থেকে উঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়েই সাকিব আবার ফিরলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তবে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় প্রথম টেস্টের আগে হাত ঘোরাননি অনুশীলনেও। অবশ্য সাকিবের ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলাটা দলের ‘আনুষ্ঠানিক’ সিদ্ধান্ত হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে এটাও শোনা গিয়েছিল, পরিস্থিতির প্রয়োজনে এবং তিনি নিজে যদি সমস্যা মনে না করেন, তাহলে দু-চার ওভার বল করতেও পারেন।
কাল সেই প্রয়োজনই পড়ল। ব্রেন্ডন টেলর যেমন উইকেটে শেকড় গেড়ে বসেছিলেন, তাতে দলের সেরা বোলার হয়েও বল না করে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকাটা সাকিবেরও উপভোগ করার কথা নয়। দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে মুশফিকুর রহিম বল তুলে দিলেন তাঁর হাতে অথবা সাকিব নিজেই তা চেয়ে নিলেন।
প্রথম ওভারে দিলেন মাত্র ১ রান—সাকিব শুরুটা করলেন দারুণ। তার পরও সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। লাঞ্চ করতে ড্রেসিংরুমে গিয়ে তাই ফিজিও বিভব সিংয়ের কড়া নির্দেশ শুনলেন, ৫ ওভারের বেশি একটি বলও নয়। ৫ ওভারের দুটি মেডেন, রান দিলেন মাত্র ৮। প্রায় পাঁচ মাস পর বোলিং করে এত ভালো শুরু হলে আত্মবিশ্বাস এমনিতেই বেড়ে যায়। আর বল করতে কোনো সমস্যাও যেহেতু বোধ করছিলেন না, চা-বিরতির আগে আরও দুই ওভার করে ফেললেন সাকিব। প্রথমটা মেডেন, পরের ওভারে দিলেন ৬ রান। সব মিলিয়ে চা-বিরতির আগে বোলিং বিশ্লেষণটা এ রকম—৭-৩-১৪-০। চা-বিরতির পর আর বোলিং করেননি। সাকিবের ওই ৭ ওভারে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের কেমন সমস্যা হয়েছে, তা বোঝাতে একটা বাড়তি তথ্য দেওয়া যেতে পারে। কাল দ্বিতীয় দিন চা-বিরতি পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানরা যে ১৩টি চার ও একটি ছয় মেরেছেন, তার কোনোটিই সাকিবের বলে নয়।
হঠাৎ বল হাতে নেওয়ার চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়াটা সাকিবের জন্য যেমন, তেমনি বড় সুসংবাদ বাংলাদেশ দলের জন্যও। জিম্বাবুয়ে সফরে আসার সময়ই বাংলাদেশ দলের সঙ্গী হয়েছিল দুটি দুশ্চিন্তা—তামিম ইকবালের আঙুলের চোট ও বোলার সাকিবকে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। বোলার সাকিবের ফেরা দিয়ে তার একটি তো অন্তত দূর হলো।
১৯ এপ্রিল /২০১৩.