যে বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) কোম্পানি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করবে, সে কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ করবে সরকার। ওই কোম্পানি পরিচালনা করে বা ওই কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনে নতুন ধারা সংযোজন করে যেকোনো কোম্পানিতে প্রশাসক বসানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। অতিরিক্ত বাণিজ্যসচিব মূর্তজা রেজা চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
ডেসটিনি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রশাসক বসানোর জন্য গত বছরের অক্টোবরে কোম্পানি আইনে এমন একটি ধারা সংযোজন করতে চেয়েছিল সরকার, যাতে যেকোনো কোম্পানিতে যেকোনো সময় প্রশাসক নিয়োগ করা যায়। দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা তখন এই উদ্যোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ধারাটি সংযোজন করে আবারও এমএলএম আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। তবে পরিবর্তন করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনটির নাম।আগের নাম ছিল ‘ডাইরেক্ট সেল আইন, ২০১২’। বর্তমানটির নাম ‘মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শিগগিরই নতুন খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
জানা গেছে, নতুন খসড়ায়ও প্রতারণা ও জালিয়াতির দায়ে অপরাধীদের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে নামমাত্র। যত বড় জালিয়াতিই হোক না কেন বা যত বেশি মানুষের সঙ্গেই প্রতারণা করা হোক না কেন, সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
তবে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও ছয় থেকে ১২ মাসের কারাদণ্ড, নির্দিষ্ট পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, মোড়কবিহীন পণ্যের ব্যবসা করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড, পরিবেশকদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ডের প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইন লঙ্ঘনে লাইসেন্স বাতিল: সূত্র জানায়, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে কোম্পানি আইনের আওতায় এমএলএম প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও নিবন্ধন নিতে হবে। তবে আইন যথাযথভাবে পরিপালিত না হলে যেকোনো সময় লাইসেন্স বাতিল করে দেবে সরকার। নতুন খসড়ায়ও এই কথা বলা থাকবে।
কিছু ক্ষেত্রে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হবে। যেমন যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম করা যাবে না।অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে, এমন পণ্য বা সেবা নিয়েও ব্যবসা করা যাবে না।
এমএলএম ব্যবসার পণ্য তালিকা: এমএলএম পদ্ধতিতে যেসব পণ্যের ব্যবসা করা যাবে, তার একটি তালিকা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গৃহস্থালি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক, হোম এপ্লায়েন্স, প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ, হারবাল, টেলিমার্কেটিং, কৃষিজ ও কৃষিজাত, টেলিকমিউনিকেশন সেবা বা ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সেবা ও পণ্য। এই তালিকা কমানো-বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে।
লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হলেও কোনো কোম্পানি যদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের পাঁচ বছরের জেল খাটতে হবে।
১৮ এপ্রিল /২০১৩.