বোলারদের বুনো উল্লাস, নান্দনিক ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য, ক্যাচ মিসের দীর্ঘশ্বাস—হারারে টেস্টের প্রথম দিন দেখিয়ে দিল সবই। দিন শেষে কারা এগিয়ে হিসাব করতে গিয়ে তাই ‘ড্র’ শব্দটাই লিখতে হচ্ছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ হোম সিরিজ আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের পর টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশ এখন বড় গলায় কথা বলতে শুরু করেছে।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই স্বর আরও উচ্চকিত হবে স্বাভাবিক। কাল থেকে শুরু হারারে টেস্টের আগে তাই স্থানীয় কন্ডিশনটাকেও বড় কোনো সমস্যা মনে হচ্ছিল না বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কাছে। টসে জিতে পেসারদের হাতে বল তুলে দিয়ে মুশফিক প্রমাণ করলেন, জিম্বাবুয়ের কন্ডিশন জয় করার মতো অস্ত্র আসলেই আছে তাঁর হাতে।
রবিউল ইসলাম-রুবেল হোসেনের দুরন্ত পেস বোলিংয়ের সঙ্গে প্রায় চার বছর পর টেস্টে ফেরা এনামুল হক জুনিয়রের বাঁহাতি ঘূর্ণি। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠে গেল তাতেই। তবু ৬৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নেওয়ার পরও টুঁটি চেপে ধরা যায়নি জিম্বাবুয়ে ব্যাটসম্যানদের। বরং চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর আর ম্যালকম ওয়ালারের ১২৭ রানের জুটিতে ম্যাচের রং যেন অনেকটাই বদলে গেল। রুবেল ওয়ালারকে ৫৫ রানে ফিরিয়ে দিলেও টেলরের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি প্রেসবক্সেও এনে দিয়েছে হাততালির উপলক্ষ। তাঁর অপরাজিত ১০৫ রানের সৌজন্যেই প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেটে জিম্বাবুয়ের স্কোর ২১৭।
উইকেটের ঘরে ‘৫’ থাকতে পারত। কিন্তু এলটন চিগুম্বুরাকে বোল্ড করেও উইকেটটা পেলেন না রুবেল।
টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু আম্পায়ার ব্যাটসম্যানকে সন্দেহের অবকাশে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে ‘নো’ ঘোষণা করলেন। বিতর্কের ঝড় তুলে দেওয়ার মতোই সিদ্ধান্ত। হারারে টেস্টে মাঠের দুই আম্পায়ারকেও বাংলাদেশের বোলারদের আবেদনে সাড়া দিতে যথেষ্ট কৃপণ মনে হচ্ছে।সারা দিনে বোলাররা যে ছয়টি এলবিডব্লুর আবেদন তুলেছেন, তার মধ্যে বেশ কয়েকটাই যথেষ্ট ‘ক্লোজ’ ছিল। অথচ সাড়া মিলেছে কেবল একটিতেই। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা টিমিচেন মারুমাকে ফিরিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় উইকেট পেয়েছেন রবিউল।
দিনের শুরুটা যেমন হয়েছিল, তাতে দিনটা শেষ হতে পারত বাংলাদেশের আধিপত্য দিয়েই। সেটি না হওয়ার মূলে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাতেরও অবদান আছে। বোলারদের হাত যতই আক্রমনে শাণ দিয়েছে, ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত ততই ধার কমিয়ে দিয়েছে সেটার। উইকেটের সুবিধা নিয়ে রবিউল-রুবেল যে রকম ক্ষুরধার বোলিং করছিলেন, তাতে শুরুতেই একটা উইকেট তাঁদের প্রাপ্য ছিল। ওপেনার মারুমা সেটা দিয়েও দিচ্ছিলেন। কিন্তু রবিউলের করা ম্যাচের প্রথম ওভারের শেষ বলে তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে প্রথম স্লিপে যাওয়া সহজ ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি শাহরিয়ার নাফীস। ক্যাচ পড়েছে আরও। এনামুলের বলে ব্যক্তিগত ৩৫ রানের সময় ওয়াইডিশ লং অফে ওই শাহরিয়ারের সৌজন্যেই নতুন ‘জীবন’ পেয়েছেন টেলর। দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নেমে এনামুলকে উইকেটবঞ্চিত হয়েছে আরও একবার। তাঁর বলে পয়েন্টে মোহাম্মদ আশরাফুল নিতে পারেননি ওয়ালারের ক্যাচ। পেসাররা ভালো শুরু এনে দিলে হারারের উইকেটেও যে বাংলাদেশের স্পিনাররা জিম্বাবুইয়ানদের যথেষ্টই সমস্যায় ফেলতে পারে, সেটির প্রমাণ ভালোই রাখলেন এনামুল। ২৯ ওভার বল করে মাত্র একটি উইকেট, এটির কারণ তো ফিল্ডারদের ব্যর্থতা।
নতুন জীবনটা নতুন করে গড়তে পারেননি মারুমা। তাই বলে ব্রেন্ডন টেলর-ম্যালকম ওয়ালারও পারবেন না, তা কী করে হয়! ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকেই অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংস দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওয়ালার। আর টেলর তো ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটেরই পরীক্ষিত সৈনিক। এ দুজনের ব্যাটিংয়ের সময় মনেই হয়নি প্রথম দিনের সকালটা পুরোপুরিই ছিল বাংলাদেশের, ইনিংসের প্রথম দুই ওভারই ছিল মেডেন! টেলরের অপরাজিত ১০৫ রানের ইনিংসে ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে আছে এনামুলের বলে লং অফ দিয়ে দিনের একমাত্র ছক্কাটিও।
প্রথম দিন শেষেও উইকেটে প্রাণ আছে বেশ। আজ প্রথম সেশনে বাংলাদেশের বোলাররা সেটাকে কতটা কাজে লাগাতে পারেন, তার ওপর টেস্টের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অনেকটাই। তবে প্রথম দিনেই যে রকম সবকিছুর দেখা মিলে গেল, হারারে টেস্টটা বোধ হয় ভালোই জমবে।
প্রথম দিন শেষে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২১৭/৪
১৮ এপ্রিল /২০১৩.